বাজেট জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব, লক্ষ্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা- অর্থ উপদেষ্টা
প্রকাশিত: জুন ০৩, ২০২৫, ০৪:৪৯ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব আখ্যা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সামনে পথটা সহজ নয়, অনেক প্রতিকূলতা রয়েছে। তবে আমরা এনবিআরকে (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। বিদেশি ঋণ আনার বিষয়েও ইতোমধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি কাঠামো দাঁড় করাতে পেরেছি।”
তিনি বলেন, “অনেকেই বলছেন আমরা আগের ধারা অনুসরণ করেছি। তবে হঠাৎ করেই যে বড় ধরনের বিপ্লবী বাজেট উপস্থাপন করব, তা সম্ভব নয়। তারপরও আমি বলব, এবারের বাজেটে কিছু নতুনত্ব আছে। আমরা চেষ্টা করেছি এমন একটি বাজেট দেওয়ার, যা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাস্তব পরিবর্তন আনবে।”
অর্থ উপদেষ্টা জানান, বাজেট এখনো চূড়ান্ত নয়। “গতকাল প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছি। এটি উন্মুক্ত থাকবে, বিভিন্ন মহল থেকে মতামত আসবে। সেই পরামর্শগুলো পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত বাজেট তৈরি হবে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমরা একসাথে কাজ করতে চাই। সরকারের প্রত্যাশা- সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে এসে সহযোগিতা করবে। দেশের এই কঠিন সময়ে আমরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই- যাতে বোঝা যায়, প্রতিকূলতার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।”
ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, “এই বাজেটের মূল নির্যাস হলো- সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে স্বচ্ছ, নিরাপদ ও সহজ করা, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো এবং সার্বিকভাবে জীবনমান উন্নয়ন। আমরা চাই, এই বাজেট মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনুক।”
বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ অর্থনৈতিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বিটিভিসহ বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমেছে, যা অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেটের আকার কমানো এবং বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। তবে এই বাজেট কতটা জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব- তা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের উপর।
সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা, এই বাজেট যেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
বাংলাধারা/এসআর