ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

সরকারি দামে নয়, চামড়া বিক্রি হচ্ছে কম দামে

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুন ০৮, ২০২৫, ০১:৪৩ রাত  

ছবি: সংগৃহিত

পবিত্র ঈদুল আজহার পর কোরবানির পশুর চামড়া রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে সাভারে আসতে শুরু করেছে। তবে সরকারি নির্ধারিত দামে বিক্রি না হওয়ায় হতাশ বিক্রেতারা। ব্যবসায়ীদের দাবি, চামড়ার গুণগত মান ভালো হলেও বাজারে মিলছে না ন্যায্য মূল্য। অন্যদিকে আড়তদাররা বলছেন, লোকসানের আশঙ্কায় নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

শনিবার (৭ জুন) রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চামড়া কেনাবেচা চলছে জোরেশোরে। কিন্তু বিক্রেতাদের অভিযোগ, তাদের কোরবানির চামড়া ১ হাজার ৩৫০ টাকা তো দূরের কথা, ৭০০ টাকাতেও বিক্রি করতে হচ্ছে অনিচ্ছা সত্ত্বেও।

লালবাগ এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান বলেন, “এবার চামড়ার সরবরাহ বেশ ভালো। তবে মূলত ছোট গরুর চামড়া বেশি আসছে। আমরা গরুর চামড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় কিনছি, কারণ এতে লবণ ও শ্রমিক খরচ ধরলে ৪০০ টাকার মতো পড়ে যায়।”

একই অভিযোগ জানিয়ে সাভার কাঁচা চামড়া আড়ত মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এমদাদুল হক (সোহরাব) বলেন, “সরকার যে দাম ঠিক করেছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। ওই দামে কিনলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে আমাদের টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ।”

অথচ সরকার গত ২৫ মে চামড়ার জন্য নির্ধারিত দামে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয় সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা। খাসির চামড়া ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুটে।

তবে বাস্তবতা ভিন্ন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অনেকেই না বুঝে উচ্চ দামে চামড়া কিনে এনেছেন, এখন তারা বিপাকে। আড়তদাররা সেই দাম দিতে নারাজ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, “এবার চামড়ার সরবরাহ ভালো, তবে ছোট আকারের চামড়াই বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় প্রতিটি চামড়ার দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি রয়েছে।”

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবারের ঈদে ট্যানারি মালিকদের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ। বাজার স্থিতিশীল রাখতে কিছু ট্যানারি প্রতিষ্ঠান সরাসরি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছে।

চামড়া পাচার রোধেও চলছে নজরদারি। বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশারফ হোসেন জানান, “সীমান্তে কঠোর নজরদারি রয়েছে। চামড়া পাচার ঠেকাতে নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।”

তবে বছরের পর বছর ধরে কোরবানির চামড়া নিয়ে বাজার বিশৃঙ্খলা, নির্ধারিত দামের বাস্তবায়ন ঘাটতি এবং অনিয়ন্ত্রিত মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং সাধারণ কোরবানিদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের উচিত বাজার ব্যবস্থাপনায় আরও সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখা।


বাংলাধারা/এসআর