বাংলাদেশ-পাকিস্তান অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হচ্ছে
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৭:৫৬ বিকাল

ছবি: সংগৃহিত
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনীতিক এবং সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ সুবিধা চালুর লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। এ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার (২৩ জুলাই) ঢাকায় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নাকভির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অন অ্যারাইভাল ভিসা সংক্রান্ত চুক্তি ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, “বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশীদার। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক দিনে দিনে আরও দৃঢ় হচ্ছে। অন অ্যারাইভাল ভিসা চুক্তির মাধ্যমে কূটনৈতিক এবং সরকারি কার্যক্রমে গতি আসবে।”
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নাকভি বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে এবং এটি শুধুমাত্র তাদের নিজ দেশের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যদি চায়, তবে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে সন্ত্রাস দমনে উপকৃত হতে পারে বলে তিনি মত দেন।
তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানের দ্বিতীয় বড় সমস্যা হচ্ছে মাদক, যা সাধারণত আফগানিস্তান থেকে পাচার হয়ে আসে।” এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমাদেরও প্রধান সমস্যা মাদক, যা মূলত মিয়ানমার থেকে আসে। এ সমস্যা মোকাবেলায় দুই দেশ অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে।”
বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণ নিয়েও আলোচনা হয়। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দুই দেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি হতে পারে। এতে সম্মতি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের সারদা পুলিশ একাডেমি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং অভিজ্ঞ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এই খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা উভয় দেশকেই উপকৃত করবে।”
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, “আমরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিচ্ছি না, তবে তাদের বিশেষ পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা আলাদাভাবে শনাক্তযোগ্য থাকে।”
জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ মানবিক কারণে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এটি আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক বিশাল বোঝা।” তিনি রোহিঙ্গাদের স্বদেশ মিয়ানমারের রাখাইনে প্রত্যাবাসনে পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করেন।
এই বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অন অ্যারাইভাল ভিসা চুক্তি ছাড়াও ভবিষ্যতে পুলিশ প্রশিক্ষণ, সন্ত্রাস দমন এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে আরও যৌথ উদ্যোগের সম্ভাবনার কথাও উঠে আসে আলোচনায়।
দুই দেশের মধ্যে ইতিহাসের শিকড় থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে এই বৈঠক বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা চালু হলে কূটনৈতিক সম্পর্কের গতি যেমন বাড়বে, তেমনি নিরাপত্তা ও মানবিক ইস্যুতেও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাধারা/এসআর