মাইলস্টোনের প্রধান ফটকে তালা, স্তব্ধতা ভেঙে দাঁড়িয়ে কৌতূহলী জনতা
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০১:০৮ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ যেন এখন এক স্তব্ধ স্মৃতিচারণার স্থান। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনার পর দ্বিতীয় দিনের মতো প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাসজুড়ে নেই শিক্ষার্থীদের কোলাহল, মাঠে নেই খেলাধুলার দৃশ্য। মূল ফটকে ঝুলছে তালা, আর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে নানা বয়সী উৎসুক জনতার ভিড়।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, তালাবদ্ধ গেটের সামনে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অভিভাবক, স্থানীয় বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মীরা। ক্যাম্পাসে প্রবেশাধিকার না থাকলেও কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। গণমাধ্যমের ক্যামেরাগুলো স্থির হয়ে আছে তালাবদ্ধ গেটের দিকে, যেন আরেকবার ঘটনাস্থলের দিকে চোখ রাখতেই এই অবস্থান।
ভোরের দিকে কিছুটা ফাঁকা থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। স্থানীয় একজন আবেগজড়িত কণ্ঠে বললেন, “দুই দিন আগেও এই মাঠে শিশুরা দৌড়াত, খেলত। এখন সেখানে তালা ঝুলছে। মনটা টানছে একবার শুধু দেখে আসি ভিতরের সেই স্কুল মাঠটা।”
গেটের ভিতরে দেখা যায়, মাঠজুড়ে অবস্থান করছে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নিরাপত্তাকর্মী। কারও ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা রোধ করা হচ্ছে কঠোরভাবে। সাংবাদিকদের অনেকেই ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি না পেয়ে গেটের বাইরেই দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করছেন চিত্র ও তথ্য।
এদিকে, সোমবারের বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার পর হতাহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ এবং আহত, নিহত ও নিখোঁজদের নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত তালিকা তৈরিতে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলমকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম, প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার, কো-অর্ডিনেটর লুৎফুন্নেসা লোপা, অভিভাবক প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মোল্লা (শিক্ষার্থী: যাইমা জাহান, চতুর্থ শ্রেণি), এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফ বিন জিয়াউর রহমান ও মো. ভাসনিম ভূঁইয়া প্রতিক।
তাদেরকে সরাসরি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ এবং তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন বলছে, এই প্রতিবেদন ভবিষ্যতে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও ঘটনার দায় নিরূপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই (সোমবার) দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও মৃত্যুবরণ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২ বলে জানা গেছে।
ঘটনার পরদিন সরকারিভাবে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। বন্ধ রাখা হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পুরো দেশজুড়ে শোক আর ক্ষোভের আবহ।
মাইলস্টোনের সেই গেট, যার প্রতিদিনই মুখর থাকত শিক্ষার্থীদের পদচারণায়, আজ সেই গেট নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে; যেন বলছে মৃত্যুর এই বিভীষিকাকে ইতিহাস করে রেখে যাওয়ার এক নীরব প্রত্যয়।
বাংলাধারা/এসআর