ঢাকা, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে বোনের পর ভাই নাফিও স্মৃতি হয়ে গেল 

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৯:১৭ সকাল  

ছবি: সংগৃহিত

উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় একের পর এক হারিয়ে যাচ্ছে কোমলমতি প্রাণ। এবার বোন নাজিয়ার পর মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হলো তার ছোট ভাই নাফিও (৯)। আগুনে দগ্ধ হয়ে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানল প্রথম শ্রেণির এই ছোট্ট শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই, একই হাসপাতালে না ফেরার দেশে পাড়ি দেয় তার বড় বোন নাজিয়াও, যার শরীরের ৯০ শতাংশই আগুনে পুড়ে গিয়েছিল।

নাজিয়া ও নাফি উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করত। দুজনেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাজিয়া তৃতীয় শ্রেণিতে আর নাফি প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার সময় কে জানত, এটাই হবে তাদের জীবনের শেষ ক্লাস!

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান সাংবাদিকদের জানান, “নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ ফ্লেইম বার্ন হয়েছিল। দীর্ঘসময় চেষ্টা করার পরও আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। এর আগে তার বোন নাজিয়াও মারা যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শুধু আমাদের এখানেই ১১ জন মারা গেছেন।”

বিমান বিধ্বস্তের ওই ভয়াবহ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের অনেকেই ছিলেন ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুকে ধারণ করা শিশুরা, যারা পড়তে এসেছিল স্কুলে, কিন্তু ফিরে গেল না আর কখনও।

মর্মান্তিক এই ঘটনার রাতে মারা যান স্কুলের শিক্ষিকা মাসুকা। ভোর রাতে মৃত্যুবরণ করে ৯ বছরের শিশু বাপ্পি, যার শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। মধ্যরাতে মারা যায় আরও চার শিক্ষার্থী—এরিকসন (দগ্ধ ১০০ শতাংশ), আরিয়ান (৮৫ শতাংশ), নাজিয়া (৯০ শতাংশ) এবং সায়ান ইউসুফ (৯৫ শতাংশ)। এদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র সন্তান বা সবচেয়ে প্রিয় মুখ ছিল।

এর আগে মৃত্যু হয়েছিল অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ, সপ্তম শ্রেণির আফনান ফাইয়াজ, প্রাইমারি সেকশনের হেড কো-অর্ডিনেটর মাহেরীন চৌধুরী এবং ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সামিনের।

একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এভাবে একে একে নিভে যাচ্ছে ছোট ছোট জীবনগুলো। পরিবারের কাছে এই ক্ষতি অপূরণীয়, দেশের কাছে এক চরম বেদনাদায়ক বাস্তবতা।

স্মরণীয় হয়ে থাকুক নাফি-নাজিয়ারা, স্মৃতি হয়ে না যাক রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধ। দায়িত্বশীলদের জবাবদিহি হোক, ভবিষ্যতের জন্য নিশ্চিত হোক নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন।

বাংলাধারা/এসআর