ঢাকা, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ, পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়

স্পোর্টস্ ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ১০:১৬ রাত  

ছবি: সংগৃহিত

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক রোমাঞ্চকর ম্যাচে ৮ রানের জয় তুলে নিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে একাধিক ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণ মেলাতে না পারায় স্বাগতিকদের সামনে মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে সফরকারীদের।

দুই দলের জন্যই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ইনফর্ম তানজিদ তামিমের পরিবর্তে একাদশে জায়গা পাওয়া নাঈম শেখ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মাত্র ৩ রান করে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। এরপর অধিনায়ক লিটন দাস আউট হন ডিপ মিডউইকেটে তুলে মারতে গিয়ে। আগের ম্যাচে রান পেয়েও এদিন ব্যর্থ ছিলেন তরুণ ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়, যিনি রান আউট হয়ে ফিরে যান রানের খাতা না খুলেই। সঙ্গী পারভেজ ইমনও ফিরে যান ১৪ বলে ১৩ রান করে। ফলে মাত্র ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বড় বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।

এমন অবস্থায় ইনিংসের হাল ধরেন শেখ মেহেদি হাসান ও জাকের আলি অনিক। দুজন মিলে গড়েন ৫৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। ধীরগতির ব্যাটিংয়ের কারণে সমালোচিত শেখ মেহেদি এদিন ছিলেন আক্রমণাত্মক। ২৫ বলে ৩৩ রান করে ফিরলেও দলের ভিত গড়ে দিয়ে যান তিনি। এরপর এক প্রান্তে উইকেট পড়লেও অপর প্রান্তে ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট চালিয়ে যান জাকের। শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ৫৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে এনে দেন লড়াই করার মতো স্কোর। নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানও পড়ে যায় ভয়াবহ বিপদে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই রানআউটে কাটা পড়েন সায়িম আইয়ুব। পরের ওভারে শরিফুল ইসলামের পরপর দুটি বলে আউট হন মোহাম্মদ হারিস ও অভিজ্ঞ ফখর জামান। এরপর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসে তানজিম সাকিব ফিরিয়ে দেন হাসান নাওয়াজ ও মোহাম্মদ নাওয়াজকে। মাত্র ১৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সফরকারীরা।

দলের অধিনায়ক সালমান আলি আগা কিছুক্ষণ উইকেটে সময় কাটালেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। মেহেদির বলে ২৩ বলে ৯ রান করে ফিরে যান তিনিও। এরপর খুশদিল শাহ আউট হলে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৪৯ রানে ৭ উইকেট।

সেখান থেকে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করেন ফাহিম আশরাফ ও আব্বাস আফ্রিদি। অষ্টম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৪১ রান। আব্বাস করেন ১৩ বলে ১৯ রান। তবে মূল লড়াই চালিয়ে যান ফাহিম। একপ্রান্ত আগলে রেখে ৩২ বলে করেন ৫১ রান। শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান, হাতে মাত্র এক উইকেট। চাপের মুহূর্তে বোলিংয়ে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বলেই চার মেরে উত্তেজনা বাড়ান দানিয়েল। তবে পরের বলেই বড় শট খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন শামীম হোসেনের হাতে। ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ।

৮ রানের জয় নিয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি এখন কেবল আনুষ্ঠানিকতা। এই জয়ে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে যুক্ত হলো আরেকটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়—প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ জয়। মাঠে-মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস, তরুণদের লড়াই এবং অভিজ্ঞদের দৃঢ়তায় আজকের মিরপুর দেখল টাইগারদের নতুন এক ইতিহাস।

বাংলাধারা/এসআর