জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল সংশোধনী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপপ্রয়াস: ওয়ার্কার্স পার্টি
প্রকাশিত: জুন ০৫, ২০২৫, ০৫:৩৬ বিকাল

ফাইল ছবি
অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক অধিকার নেই এমন অধ্যাদেশ প্রণয়নের- মন্তব্য পলিটব্যুরোর
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশ (সংশোধনী) ২০২৫-এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দলটির পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে এ সংশোধনীকে ‘পরিকল্পিত চাতুরিপনা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান’ এবং ‘ইতিহাস বিকৃতির সুস্পষ্ট প্রয়াস’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওয়ার্কার্স পার্টি অভিযোগ করে, একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো নৈতিক অধিকার নেই জাতির সর্বোচ্চ ত্যাগ ও অহংকারের ইতিহাস সংশোধনে হস্তক্ষেপ করার। দলটির নেতৃবৃন্দের ভাষায়, “এই সরকার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির দ্বারা প্রভাবিত এবং তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দর্শনকে মুছে ফেলা।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “সংশোধিত অধ্যাদেশের ২ নম্বর ধারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলা হয়েছে এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়’ শব্দগুচ্ছ বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে যা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দর্শনকে অস্বীকার করার নামান্তর। এটি একটি পরিকল্পিত চাতুরিপনা।”
অধ্যাদেশের ১৫ নম্বর ধারায় সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত (ক, খ, গ, ঘ, ঙ) উপধারাগুলোর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক ও সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তিকে বিভাজনের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে বলেও দাবি করেছে দলটি। এতে সম্মুখযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা নামে এক বিভ্রান্তিকর শ্রেণিবিভাগ তৈরি হবে বলে তাদের আশঙ্কা।
ওয়ার্কার্স পার্টি মন্তব্য করে, “এটি শুধু বিভাজন নয়, বরং ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন ও ব্যক্তিত্বদের অবমূল্যায়নের পথ রচনা করবে। এটি ষড়যন্ত্রমূলক এবং জাতির ইতিহাস মুছে দেওয়ার অপচেষ্টা।”
দলটি স্পষ্ট করে জানায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক দীর্ঘ ২৫ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের ফল। যেখানে ৩০ লক্ষ শহীদের প্রাণ, দুই লক্ষ নারীকে লাঞ্ছনা, কোটি মানুষের দেশান্তর, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সর্বস্ব হারানোর মধ্য দিয়েই অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। সেই যুদ্ধের পক্ষে থাকা মানেই ছিল ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়’। আর সেই পরিচয়কে এখন বিভাজনের মাধ্যমে মুছে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে তারা মন্তব্য করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “যেভাবে এদেশে রাজাকার, আলবদর, আল-শামসকে স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক, সামাজিক সব শক্তিকেই স্বীকৃতি দিতে হবে। তা না করে ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ আড়ালে মূল নেতৃত্বকে আড়াল করার চেষ্টাই ইতিহাসের প্রতি অপরাধ।”
ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে এখনই সংগঠিত হতে হবে এবং একযোগে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
বিবৃতিটি প্রেরণ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় মিডিয়া বিভাগের আহ্বায়ক মোস্তফা আলমগীর রতন।
বাংলাধারা/এসআর