ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন: সবজি-মুরগির দাম বেড়ে চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ০৯, ২০২৫, ১২:২৮ দুপুর  

ছবি: বাংলাধারা

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে ফের আগুন। বিশেষ করে সবজি ও মুরগির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে হু-হু করে। বাজারে গিয়ে হাঁকডাক শুনে যেন সাধারণ মানুষই ঘাবড়ে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত তো বটেই, নিম্নবিত্তরাও পড়েছেন চরম বিপাকে।

শুক্রবার (৯ মে) সকালে রাজধানীর খিলক্ষেত, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শান্তিনগর, মালিবাগসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের তুলনায় বেশিরভাগ সবজির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, শসা, কাঁচা মরিচ, পটোল, কচুর লতি, কাঁকরোল, বরবটি, ঝিঙে, টমেটো, পেঁপে, গাজর, সজনে ডাটা- প্রায় সব ধরনের সবজির দামই চড়া।

বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম উঠে এসেছে- করলা ৭০-৮০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০-৯০ টাকা, কাঁকরোল ১০০-১৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৭০ টাকা, ঝিঙে ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৭০-৮০ টাকা, পটোল ৭০-৮০ টাকা এবং সজনে ডাটা ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে। বাজার ও মানভেদে দামে কিছুটা তারতম্য থাকলেও সামগ্রিক চিত্র ভয়াবহ।

শুধু সবজিই নয়, রান্নার অন্যতম উপকরণ পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও হু-হু করে বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রসুন ও আদার ক্ষেত্রেও একই রকম মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

একই সঙ্গে মুরগির বাজারেও আগুন। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি ১৭০-১৮০ টাকা হয়েছে, যেখানে এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৫৫-১৬০ টাকা। সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজিতে, আর কক জাতের মুরগি ৩৩০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফিডের দাম, পরিবহন খরচ ও খামারে উৎপাদন হ্রাস- সব মিলিয়ে এই দাম বৃদ্ধি। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই সুযোগে এক শ্রেণির মজুতদার ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে চলছে।

তবে মাছের বাজার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। যেমন- রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪২০ টাকায়, কাতল ৩৮০-৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, কৈ ২০০-২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, পাঙাশ ১৮০-২৩৫ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৫০-২২০ টাকা কেজি দরে।

গরু ও খাসির মাংসের দামে আপাতত কোনো পরিবর্তন নেই। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি দরে, খাসির মাংস ১২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১১০০ টাকা কেজিতে।

বাজার করতে আসা সাধারণ মানুষের মুখে ক্ষোভের ঝড়। খিলক্ষেত বাজারে আসা আমিরুল ইসলাম বলেন, “সবজির দাম শুনলেই ভয় লাগে। এক কেজি বেগুন ১০০ টাকা! মুরগি কিনতে গেলেও আরেক ধাক্কা। এমন অবস্থায় তো ডাল-ভাতেই চলতে হবে।”

মিরপুরে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকুরিজীবী দিনেশ কুমার বলেন, “মাসের শুরুতেই বাজার করতে গিয়ে পুরো বেতন শেষ হয়ে যায়। সরকার যদি এখনই কিছু না করে, তাহলে মানুষ হয়তো আর বাজারে যেতে পারবে না।”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারির অভাব, সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সিন্ডিকেটের কারসাজি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন- টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ, বাজার মনিটরিং জোরদার করা এবং মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে কৃষি উৎপাদন ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ছাড়া এই বাজার সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

 

বাংলাধারা/এসআর