ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্ব মা দিবস আজ: শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর চিরন্তন এক বন্ধনের উদযাপন

শারমিন রহমান

 প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ১১:৫৭ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

আজ বিশ্ব মা দিবস। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও নিখাদ ভালোবাসা জানানোর এক বিশেষ দিন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বাংলাদেশসহ, প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার দিনটি পালিত হয়। যদিও ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে কোনো নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন নেই, তবুও মাকে একটু আলাদাভাবে স্মরণ করার, কৃতজ্ঞতা জানানোর এই দিনটি হয়ে উঠেছে আবেগ ও ভালোবাসার অনন্য উৎসব।

‘মা’ শুধু একটি শব্দ নয়- এটি সন্তানের কাছে আশ্রয়ের, নির্ভরতার এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক। সেই মা, যিনি দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান, নিজের স্বপ্ন-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি ফোটান- তিনি যে কোনো সম্মানের ঊর্ধ্বে।

মায়ের সঙ্গে সন্তানের আত্মিক সম্পর্কটি জন্মসূত্রে হলেও, তার গভীরতা জন্ম-জন্মান্তরের। আর এই সম্পর্কের টানেই যুগে যুগে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, এমনকি চলচ্চিত্র ও চিত্রকর্ম। বাংলা সাহিত্যেও মাকে নিয়ে লেখা হয়েছে কালজয়ী বহু কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “মনে পড়া”, শামসুর রাহমানের “কখনো আমার মাকে”, হুমায়ুন আজাদের “আমাদের মা”, আল মাহমুদের “নোলক”—এসব রচনায় ধরা পড়েছে মাকে ঘিরে গভীর আবেগ ও অমোচনীয় ভালবাসা।

প্রতিটি ধর্ম ও সংস্কৃতিতেই মায়ের মর্যাদা অপরিসীম। ইসলাম ধর্মে মাকে তিনবার বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে,
“আমি মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছে।” - (সুরা লোকমান: ১৪)।

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ভাষাতেই ‘মা’ শব্দটির উচ্চারণে এক আশ্চর্য মিল দেখা যায়। জার্মান ভাষায় ‘মুটার’, ওলন্দাজ ভাষায় ‘ময়েদার’, চীনা ভাষায় ‘মামা’, সোয়াহিলি ও হিন্দিতে ‘মা’- এই সব শব্দের শুরুতেই রয়েছে ‘ম’ বা ‘এম’ ধ্বনি। ভাষাবিদ রোমান জ্যাকবসন মনে করেন, শিশুরা যখন বুকের দুধ পান করে, তখন মুখভর্তি অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই যে ধ্বনি বের হয় তা ‘ম’ এর কাছাকাছি। এই ধ্বনি থেকেই গড়ে উঠেছে 'মা' শব্দের বহুভাষিক রূপ।

ইংরেজি ‘মম’ শব্দটিও এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘মাম্মা’ থেকে, যার অর্থ স্তন। এই ‘মাম্মা’ থেকেই এসেছে ‘ম্যামেল’ শব্দ, যা স্তন্যপায়ী প্রাণী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

বিশ্ব মা দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় যুক্তরাষ্ট্রে, ১৮৭০ সালে। মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চলাকালে ‘Mother’s Day Proclamation’ নামক এক আহ্বানপত্র প্রকাশ করেন, যেখানে নারীর ভূমিকা ও শান্তির জন্য মায়েদের জোরালো ভূমিকা রাখার কথা বলা হয়।

পরবর্তীতে আরেক সমাজকর্মী আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস এবং তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস মাকে ঘিরে বিশেষ একটি দিন পালনের উদ্যোগ নেন। আনা রিভসের মৃত্যুর পর, তার মেয়ে আনা ১৯০৮ সালে মায়ের স্মরণে একটি গির্জায় প্রথম আনুষ্ঠানিক মা দিবসের আয়োজন করেন। এরপর দীর্ঘ প্রচেষ্টায় অবশেষে ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মাদার্স ডে’ হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং এটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।

এরপর থেকে ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী মা দিবস পালিত হতে শুরু করে। বাংলাদেশেও দিনটি এখন পালিত হয় ঘরোয়াভাবে কিংবা সামাজিক, সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে।

আমাদের জীবনের প্রতিটি বাঁকে মায়ের ছায়া অবিচ্ছেদ্য। শিশুকালে আশ্রয়, যৌবনে প্রেরণা, আর বার্ধক্যে আশীর্বাদ- মা সর্বত্রই অনুপম। আজকের দিনে তাই শুধু স্মরণ নয়, বরং সকল মাকে অন্তরের গভীর থেকে ভালোবাসা জানানোর সময়।

আজ বিশ্ব মা দিবসে আমরা যেন প্রতিজ্ঞা করি- মাকে শুধু এক দিনের শ্রদ্ধা নয়, প্রতিদিনের যত্ন, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেওয়ার।

 

বাংলাধারা/এসআর