ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও উৎসবের আবহ

শারমিন রহমান

 প্রকাশিত: মে ০৮, ২০২৫, ১১:০৬ দুপুর  

ফাইল ছবি

আজ ২৫ বৈশাখ- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের অমর রূপকার, সৃজনশীলতার বিস্ময়কর এক প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১২৬৮ বঙ্গাব্দে, কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ঠাকুর পরিবারের বিদ্বৎ পরিবেশেই তিনি বেড়ে উঠেন, যেখান থেকে শুরু হয় এক মহাকাব্যিক সাহিত্যযাত্রা।

এ বছর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’। কারণ, এদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনায় রবীন্দ্রনাথ অনিবার্যভাবে জড়িয়ে আছেন। তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বাধীনতার অনুভূতির সঙ্গে গেঁথে আছে প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার কবিতা ও গান ছিল মুক্তির গান, প্রেরণার বাতিঘর। সংকটের মুহূর্তে, বেদনার সময়ে কিংবা আনন্দের উৎসবে- রবীন্দ্রনাথের রচনাই হয়ে ওঠে আত্মার আশ্রয়। তার কবিতা, গান, নাটক, গল্প—সবকিছুতেই মানুষের গভীর আবেগ, বেদনা, আশা, প্রেম ও প্রতিবাদের এক বিশাল জীবনবোধের প্রতিফলন ঘটে।

১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান রবীন্দ্রনাথ, যা ছিল তৎকালীন উপমহাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন। তিনি শুধু একজন কবিই ছিলেন না, ছিলেন একাধারে দার্শনিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, শিক্ষাবিদ, সমাজচিন্তক ও মানবতাবাদী।

বাংলাদেশে কবিগুরুর জন্মদিন ঘিরে প্রতিবছর আয়োজন হয় নানা অনুষ্ঠানমালার। এবারও ব্যতিক্রম নয়। জাতীয় পর্যায়ে আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) থেকে তিন দিনব্যাপী উদযাপন শুরু হচ্ছে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে অবস্থিত রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে, যা কবির জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বহন করে। উন্মুক্ত এই আয়োজন চলবে ৮, ৯ ও ১০ মে পর্যন্ত (২৫, ২৬ ও ২৭ বৈশাখ)। থাকছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, রবীন্দ্র সংগীত, আবৃত্তি ও চিত্রপ্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি।

শিলাইদহে কবিগুরু দীর্ঘ সময় বসবাস করেছেন। এখানকার নিসর্গ, পদ্মার ঢেউ আর প্রান্তরের নিস্তব্ধতা তার অনেক লেখায় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল। কুঠিবাড়ির প্রতিটি ইট-পাথরে আজও জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথের সৃজনচেতনার ছাপ।

রবীন্দ্রনাথ আজ শুধু একজন সাহিত্যিক নন, তিনি এক জীবন্ত দর্শন। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, এমনকি মানবতাবাদের আলোচনায়ও তিনি চিরপ্রাসঙ্গিক। তার চিন্তা, চেতনা, দর্শন ও সৃষ্টি আগামী প্রজন্মের পথ চলায়ও আলো হয়ে জ্বলে থাকবে।

 

বাংলাধারা/এএস