এলডিসি থেকে উত্তরণে দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপের তাগিদ দিলেন ড. ইউনূস
প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ০৪:৩৪ দুপুর

ছবি: পিআইডি
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ একটি বড় অর্জন হলেও এই প্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ নয়। উত্তরণ-পরবর্তী সময়কে সফল ও টেকসই করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে দ্রুত, সমন্বিত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (১১ মে) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন কমিটির সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান। বৈঠকে দেশের এলডিসি উত্তরণ-সংক্রান্ত অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিনিয়োগকারী, দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারদের মনোযোগ ও সমর্থন ইতোমধ্যেই পেয়েছি। এখন সময় এসেছে আমাদের কর্মপরিকল্পনাগুলোকে আরও জোরদার করার। আমাদের একটি চটপটে, দক্ষ এবং দায়িত্বশীল টিম লাগবে, যারা অগ্নিনির্বাপকের মতো সংকটে দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়বে। হুইসেল বাজলে তারা যেন সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেয় এবং সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যায়।”
তিনি আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এলডিসি উত্তরণের সার্বিক প্রক্রিয়া তদারকিতে সক্রিয় ও জবাবদিহিমূলক ভূমিকা পালন করবে।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির গুরুত্ব তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ শুধু কাগজে কলমে নয়, বাস্তবে টেকসই রূপ নিতে হলে দেশের নীতি-প্রণয়ন, অবকাঠামো, শিল্প, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি খাতে সুসংহত প্রস্তুতি থাকতে হবে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও অংশীদারদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ চিহ্নিত
সভায় এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন কমিটি পাঁচটি জরুরি ও অগ্রাধিকারভিত্তিক পদক্ষেপ চিহ্নিত করে, যেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন দেশের উত্তরণপথকে আরও সুসংহত করবে। পদক্ষেপগুলো হলো-
- জাতীয় একক জানালা বাস্তবায়ন: সব প্রাসঙ্গিক সংস্থার অংশগ্রহণে জাতীয় একক জানালার (National Single Window) পূর্ণাঙ্গ কার্যকারিতা নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানিতে সময় ও খরচ কমবে এবং ব্যবসা সহজ হবে।
- জাতীয় শুল্কনীতি বাস্তবায়ন: ২০২৩ সালের জাতীয় শুল্কনীতি একটি আধুনিক ও রপ্তানিমুখী কাঠামো গঠনে সহায়ক। এর একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
- জাতীয় লজিস্টিক নীতি কার্যকর করা: অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সরবরাহ চেইন উন্নয়নের জন্য ২০২৪ সালের জাতীয় লজিস্টিক নীতির অধীনে নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
- সাভার ট্যানারি গ্রামের ইটিপি প্রস্তুত করা: পরিবেশ সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত পণ্যের মান বজায় রাখতে সাভারের ট্যানারি এলাকায় বর্জ্য শোধনাগার (ETP) কার্যকরভাবে প্রস্তুত করার ওপর জোর দেওয়া হয়।
- এপিআই পার্কের কার্যকারিতা: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গঠিত অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (API) পার্কের পূর্ণাঙ্গ কার্যকারিতা নিশ্চিত করা। ওষুধ শিল্পে আত্মনির্ভরতা অর্জনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এলডিসি উত্তরণ কমিটির সদস্য ও নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।
সবার মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটি রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এলডিসি থেকে উত্তরণ এ দেশের সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে- যদি সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
বাংলাধারা/এএস