স্বাস্থ্যখাতে বড় সংস্কারের পথে দেশ: প্রস্তাব ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের
প্রকাশিত: মে ০৫, ২০২৫, ০৪:২২ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
দেশের স্বাস্থ্যখাতে কাঠামোগত ও নীতিগত বড় ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। তারা একটি স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠনের সুপারিশ করেছে, যা বর্তমান বিসিএস (স্বাস্থ্য) কাঠামোর বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
সোমবার (৫ মে) সকালে কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, সবার জন্য সুলভ চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ এবং বিদেশমুখিতা কমানোর লক্ষ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপারিশসমূহ একনজরে:
স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠন
বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের পরিবর্তে একটি বিশেষায়িত ও পেশাগত কাঠামো গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার জন্য থাকবে আলাদা ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য)’। এতে দক্ষতা ও নিরবচ্ছিন্ন পেশাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে বলে মত কমিশনের।
ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পদোন্নতি কাঠামো
চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও প্রশাসন- এই তিনটি খাতে পর্যাপ্ত পদসোপান তৈরির মাধ্যমে লাইন প্রমোশনের সুযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বে যেতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে 'সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস'-এ প্রবেশের সুযোগ চালুর প্রস্তাব রয়েছে।
শিক্ষা ও সেবা আলাদা প্রশাসনের অধীনে
চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একাডেমিক ও সার্ভিস ইউনিটে ভাগ করে আলাদাভাবে পরিচালনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রশাসনিক দক্ষতা ও সেবার মান একযোগে বৃদ্ধি পায়।
জনবল নিশ্চিত ও উপস্থিতি তদারকি
নতুন হাসপাতাল স্থাপনের আগে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, ডিজিটাল হাজিরা ও সরেজমিন তদারকি বাড়িয়ে কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বাজেট বণ্টনে রোগীভিত্তিক পদ্ধতি ও দালাল দমন
হাসপাতেলে শয্যা সংখ্যা নয়, বরং সেবা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাজেট বরাদ্দের সুপারিশ করেছে কমিশন। দালালচক্র নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের অধিকার রক্ষায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন এবং ল্যাবরেটরিগুলোর মান নিয়ন্ত্রণে একটি রেগুলেটরি অথরিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।
ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি
জেলা, উপজেলা ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ খোলার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনায় বেসরকারি অংশগ্রহণ
গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে আউটসোর্সিং মডেলের প্রস্তাব করেছে কমিশন।
কমিশনের মতে, এসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে দেশের স্বাস্থ্যখাত আরও গতিশীল ও গণমুখী হবে। একইসঙ্গে সংবিধানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অন্তর্ভুক্ত করে তা বিনামূল্যে নিশ্চিত করার বিষয়টিও সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নানা সমস্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও সমাধানপন্থা খুঁজে বের করতেই এই কমিশন গঠন করা হয়। প্রতিবেদনটি এখন সরকারের বিবেচনার অপেক্ষায়।
বাংলাধারা/এসআর