বজ্রপাত ও কালবৈশাখীর ছোবল: ৫ জেলায় প্রাণ গেল ১২ জনের
প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ১১:০৯ রাত

ফাইল ছবি
দেশের পাঁচটি জেলায় রোববার (১১ মে) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বজ্রপাত ও কালবৈশাখী ঝড়ে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন এবং কালবৈশাখীতে পড়ে যাওয়া গাছের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন আরও ২ জন। নিহতদের অধিকাংশই মাঠে কৃষিকাজ করছিলেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি।
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, যেখানে বজ্রপাতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিশোরগঞ্জে নিহত হয়েছেন কলেজ শিক্ষার্থীসহ ৩ জন। শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ময়মনসিংহে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার বিকেল ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে জেলার নাসিরনগর ও আখাউড়া উপজেলায় বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- নাসিরনগরের চাঁনপুর গ্রামের কৃষি শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক (৩৫), গোকর্ণ গ্রামের শামসুল হুদা (৬৫), কচুয়া গ্রামের শিশু জাকিয়া (৭) এবং আখাউড়ার রুটি গ্রামের সেলিম মিয়া (৬০) ও বনগজ গ্রামের যুবক জাকির খাঁ (২২)।
নাসিরনগরে বজ্রাঘাতে গুরুতর আহত হন হামিদা বেগম (৪০), যিনি বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য অনুযায়ী, বজ্রপাতের সময় অধিকাংশ নিহত ব্যক্তি খোলা মাঠে ধান কাটার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন বলেন, “এটি একটি হৃদয়বিদারক দিন। এই দুর্ঘটনাগুলো আমাদের আরও সচেতন হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে।”
কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলায় বজ্রপাতে নিহত হন ফারুক মিয়া (৬০), ফয়সাল মিয়া (২৮) ও কলেজ শিক্ষার্থী কবির হোসেন (১৭)। তিনজনই খোলা জমিতে কৃষিকাজের সময় বজ্রপাতে আক্রান্ত হন। কবির হোসেন ভৈরবের হাজী আসমত কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. উম্মে হাবিবা জুই জানান, “তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।”
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যান খবির উদ্দিন (৪৫)। আহত হন শ্রমিক সকুল (২০)। তারা স্থানীয় এক কৃষকের জমিতে শ্রমিক হিসেবে ধান কাটছিলেন। হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টিপাত শুরু হলে মাঠেই বজ্রপাতের শিকার হন তারা।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি সোহেল রানা জানান, ঘটনার সময় ৮-৯ জন শ্রমিক মাঠে কাজ করছিলেন। আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বুলনপুরে বজ্রপাতে মারা যান ধান কাটতে আসা শ্রমিক আব্দুল কাইয়ুম (৫৫)।
স্থানীয়রা জানান, বজ্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মরাকুড়ি বাজার এলাকায় কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে প্রাণ হারান মো. সজীব (২৩) ও মো. সুরুজ মিয়া (৬০)। সজীব মাঠে গরুর ঘাস কাটতে গিয়ে ঝড়ের সময় কড়ই গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু গাছটি উপড়ে পড়ে তার ওপর।
অপরদিকে, বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সুরুজ মিয়ার ওপর একটি গাছের ডাল ভেঙে পড়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই খোলা মাঠে না যাওয়া এবং বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে আশ্রয় না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বাংলাধারা/এসআর