শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে সরিয়ে দিল সরকার
প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৫, ১১:৩৫ রাত

অধ্যাপক শুচিতা শরমিন, অধ্যাপক গোলাম রব্বানি ও অধ্যাপক মামুন অর রশিদ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) চলমান ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত পদচ্যুত হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মামুন অর রশিদ। রাষ্ট্রপতির আদেশে মঙ্গলবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, অধ্যাপক শুচিতা শারমিনকে তাঁর পূর্বের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে উপ-উপাচার্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কোষাধ্যক্ষকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের পুরোনো কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
উপাচার্য অপসারণের খবরে মঙ্গলবার রাতেই ক্যাম্পাসজুড়ে বইতে থাকে আনন্দের ঢেউ। ববি শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল বের করেন এবং চলমান আমরণ অনশন ভেঙে দেন ১২ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অবশেষে কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনায় ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল স্বস্তির নিঃশ্বাস।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা বহুদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলাম। ভিসিকে অপসারণ না করলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো—এমন আলটিমেটামও দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি উল্টো অপতৎপরতায় লিপ্ত হন। বাধ্য হয়ে আমাদের ভাইয়েরা আমরণ অনশন শুরু করেন। আজ প্রমাণ হলো, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না।"
সোমবার রাতে ঢাকায় অবস্থানরত উপাচার্য ড. শুচিতা শারমিন ফেসবুক লাইভে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘আলোচনার’ চেষ্টা করেন। কিন্তু লাইভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। বিশেষ করে ছাত্রদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা জিমির আবেদন সত্ত্বেও আর্থিক সহায়তা না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। উল্লেখ্য, জিমি কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেন।
উপাচার্যের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ওই রাতেই ১২ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন, যা শেষ পর্যন্ত প্রশাসনকে নতি স্বীকারে বাধ্য করে।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস-সংলগ্ন ঢাকা–কুয়াকাটা মহাসড়কে অবস্থান নেন এবং যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন। ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জেলা—কুয়াকাটা, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং ভোলার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। দুই পাশেই সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।
অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন গত ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দূরত্ব এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ফলে মাত্র আট মাসের মাথায় তাঁকে দায়িত্ব ছাড়তে হলো।
শিক্ষার্থীরা প্রথমে চার দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন গত ২২ এপ্রিল। কিন্তু দাবি মানা হয়নি। ফলে ৪ মে থেকে তাঁরা সরাসরি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে একদফা আন্দোলনে নামেন। একের পর এক কর্মসূচি, অবস্থান, অনশন ও সড়ক অবরোধ শেষে অবশেষে তাঁদের দাবি পূরণ হলো।
বাংলাধারা/এসআর