বৈধ অভিবাসনের নতুন দুয়ার: মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে চূড়ান্ত বৈঠক আজ
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ১১:৩১ দুপুর

ফাইল ছবি
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নতুন করে উন্মুক্ত হতে চলেছে। স্বল্প ব্যয়ে এবং শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষার শর্তে আগামী কয়েক বছরে দেশটি প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার শ্রমিক সম্পূর্ণ বিনা খরচে যেতে পারবে- যা শ্রমিকদের জন্য এক বড় সুখবর।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) মালয়েশিয়ার রাজধানী পুত্রজায়ায় বসছে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে এই বৈঠকটি।
মালয়েশিয়ার সরকার তাদের অর্থনীতিতে বিদেশি কর্মীদের বিশেষ করে নির্মাণ, পরিষেবা, কৃষি ও উৎপাদন খাতে বড় ভূমিকা রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার চাইছে, এই প্রক্রিয়ায় যেন দালালচক্রের দৌরাত্ম্য কমে এবং শ্রমিকরা ন্যায্য খরচে এবং সম্মানের সঙ্গে বিদেশে কাজের সুযোগ পায়।
বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল (১৪ মে) মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছে। এতে রয়েছেন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া ও উপসচিব মো. সরোয়ার আলম।
বিশ্লেষকদের মতে, মালয়েশিয়ার শ্রমিকদের জন্য প্রস্তাবিত বেতন মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের তুলনায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি। তবুও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও দুর্নীতির কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কার্যত বন্ধ ছিল। এবার সরকারের সক্রিয় উদ্যোগে সেই জটিলতা কাটতে শুরু করেছে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, অতীতে রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসায়িক স্বার্থ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা শ্রমবাজারকে জিম্মি করে রেখেছিল। এখন সরকার সেই চাপ উপেক্ষা করে, শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন চুক্তি করতে যাচ্ছে।
কর্মসংস্থানসংক্রান্ত ব্যবসায়ীদের একটি অংশ, যারা বিদেশে গিয়ে কাজ আনতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা দেশে বসেই আন্দোলন, মানববন্ধন, টকশো আর স্মারকলিপির মাধ্যমে অন্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অনেক সময় তারা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থাকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে। এর ফলশ্রুতিতে শ্রমবাজার নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা শুরু হয়, যা বিদেশি নিয়োগদাতা দেশের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব মামলা এমনকি বৈধভাবে অভিবাসনের পরেও মানব পাচার ও মানি লন্ডারিং আইনে পরিণত হয়, যা মালয়েশিয়া ছাড়াও অন্যান্য শ্রমবাজারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহকে স্থিতিশীল রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশাল এই শ্রমবাজারে স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা বজায় রেখে সরকার চাইছে, শ্রমিকরা যেন নিরাপদ ও ন্যায্য অভিবাসনের সুযোগ পায়।
কর্মসংস্থান খাতে সরকারের অভিজ্ঞরা বলছেন, “রিসিভিং কান্ট্রিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়। তাই কোনো ধরনের অনিয়ম কিংবা অনভিপ্রেত ঘটনা বিদেশি নিয়োগদাতাদের আস্থা নষ্ট করতে পারে।”
তারা আরও বলেন, এখনই সময়- ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থকে পেছনে ফেলে রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও শ্রমবাজারকে স্থায়ী ও নিরাপদ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার।
বাংলাধারা/এসআর