২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি শুরু
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ১১:৫০ দুপুর

ফাইল ছবি
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টে দেওয়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চে এই শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার ভুঁইয়া ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দেন। এরপর ১৯ ডিসেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথকভাবে লিভ টু আপিল করে।
চলতি বছরের ১৩ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত শুনানি শেষে আবেদন দুটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ থেকে শুরু হলো আপিল শুনানি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় চালানো হয় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রাণ হারান আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন অন্তত তিন শতাধিক নেতা-কর্মী।
ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়- একটি হত্যা এবং অন্যটি বিস্ফোরক আইনে।
২০০৮ সালের ১১ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেওয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ৩০ জনকে যুক্ত করা হয়, ফলে মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২।
তবে পরবর্তীতে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান এবং শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় কার্যকর হওয়ায় কার্যত আসামি থাকে ৪৯ জন।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দেওয়া বিচারিক আদালতের রায়ে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু, হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, হানিফ পরিবহনের মালিক ও বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফসহ অনেকে।
তারেক রহমান, সাবেক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আরিফুল ইসলাম, মুফতি শফিকুর রহমানসহ আরও ১৩ জন।
প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তকে এক লাখ টাকা ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এই মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার খান সাঈদ হাসানসহ ১১ জন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাকেও দুই বছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ অধিকাংশ আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি বলে উল্লেখ করে রায় দেয়। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, "এই হামলা কেবল একটি রাজনৈতিক সহিংসতা নয়, এটি ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারের চূড়ান্ত রূপ। হাইকোর্টের রায়ে সে চিত্র ধুয়েমুছে ফেলা হয়েছে, যা বাস্তবতার পরিপন্থী।"
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাস পাওয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল এখন আপিল বিভাগে শুনানির পর্যায়ে। এই শুনানির ফলাফল শুধু একটি মামলার নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, বিচার ব্যবস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলার ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাধারা/এসআর