প্রাণ রক্ষায় সেনানিবাসে আশ্রয়: আইএসপিআর প্রকাশ করল ৬২৬ জনের নাম
প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৫, ১১:৪৪ দুপুর

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে প্রাণ বাঁচাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের পরিচয় প্রকাশ করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। বৃহস্পতিবার রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৫৭৮ জনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি।
আইএসপিআরের মতে, জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকারের পতনের পর একাধিক কুচক্রী মহলের উসকানিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হামলা, লুটপাট, মব জাস্টিস ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে সাধারণ নাগরিকরা।
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ- including রাজনীতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিচারক ও পুলিশ সদস্যরা- সেনানিবাসে নিরাপত্তার আশ্রয় নেন। মানবিক বিবেচনায় সেনাবাহিনী তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়।
আইএসপিআর জানায়, মোট ৬২৬ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, যাদের মধ্যে রয়েছেন:
- ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তি
- ৫ জন বিচারক
- ১৯ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা
- ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য
- ১২ জন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা ও অন্যান্য
- ৫১ জন নারী ও শিশু (পরিবার সদস্য)
এদের মধ্যে অধিকাংশই এক থেকে দুই দিনের মধ্যে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। আইনগত কারণে পাঁচজনকে সংশ্লিষ্ট মামলার আওতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর উল্লেখ করে, “এটি কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় নয়, বরং আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঝুঁকি থেকে মানুষকে রক্ষার একটি মানবিক উদ্যোগ।” পরিস্থিতি উত্তরণের পর অধিকাংশ আশ্রয়প্রার্থী স্বেচ্ছায় সেনানিবাস ত্যাগ করেন।
১৮ আগস্ট আইএসপিআর প্রথমবারের মতো এই বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় এবং একই দিনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১৯৩ জনের একটি তালিকাও পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবারের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বিস্তারিত তথ্য এবং ৬২৬ জনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সংযুক্ত করা হয়, যার মধ্যে রয়েছেন ৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও একজন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সদস্য।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দূরত্ব তৈরি করতে চায় বলে দাবি করে সংস্থাটি।
সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত এই সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা নিয়ে অনেক গুজব ও প্রশ্ন ঘুরে বেড়ালেও, আইএসপিআরের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এই তালিকা ও বিবৃতি কিছুটা স্বচ্ছতা তৈরি করেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী সংকটময় সময়ে সেনাবাহিনীর এই ভূমিকা দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বাংলাধারা/এসআর