টিউলিপ সিদ্দিকের ১৩ বছরের আয়কর নথি ও ফ্ল্যাটের কাগজ জব্দ
প্রকাশিত: জুন ০৪, ২০২৫, ০৯:৫৯ রাত

ফাইল ছবি
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। কমিশন তার বিগত ১৩ বছরের আয়কর নথি এবং ঢাকার শ্যামলীর রিং রোডে জনতা হাউজিং সোসাইটিতে তার নামে থাকা একটি ফ্ল্যাটের কাগজপত্র জব্দ করেছে।
বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, “অনুসন্ধানের প্রয়োজনে কোনো কর্মকর্তা চাইলে যেকোনো আয়কর নথি জব্দ করে তা যাচাই করতে পারেন।”
দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে জব্দকৃত নথিগুলোতে টিউলিপের গুলশানের একটি ফ্ল্যাটের তথ্য রয়েছে, যেটি ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফ্ল্যাটটি ঢাকার ৭১ নম্বর রোডের ১১এ ও ১১বি নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত।
মঙ্গলবার কর অঞ্চল-৬-এর কর সার্কেল-১২২-এর উপকর কমিশনারের কার্যালয় থেকে উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন এই নথিগুলো জব্দ করেন।
জব্দকৃত ৮৭ পৃষ্ঠার নথিতে ২০০৬-০৭ করবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ করবর্ষ পর্যন্ত দাখিল করা আয়কর রিটার্ন এবং অন্যান্য সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, ২০০৬-১৫ করবর্ষ পর্যন্ত প্রতিটি রিটার্নে ‘অ্যাডভান্স টুওয়ার্ডস ডেভেলপার্স’ নামে ৫ লাখ টাকার ব্যয়ের তথ্য রয়েছে।
২০১৫-১৬ করবর্ষে গুলশানের উক্ত ফ্ল্যাটটি তার ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীকে হেবা (দান) হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলে নথিতে উল্লেখ রয়েছে। বিষয়টি প্রমাণে একটি নোটারীকৃত দলিলও সংযুক্ত রয়েছে (রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ০১, তারিখ: ২১-০৬-২০১৫)।
তবে ২০১৮-১৯ করবর্ষের পর থেকে টিউলিপ আর কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি বলে নথিতে বলা হয়েছে।
গত ১৫ এপ্রিল দুদক টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলা করে, যেখানে অভিযোগ করা হয়—তিনি গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড থেকে কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেছেন। মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়েছে, এ প্রক্রিয়ায় রাজউকের দুই কর্মকর্তার সহযোগিতাও তিনি পেয়েছেন।
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গুলশান এলাকার এই প্লটের হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৭ সালে, শেখ হাসিনার প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বকালেই। টিউলিপের বিরুদ্ধে এই ফ্ল্যাট গ্রহণের অভিযোগ সেই সময়কার ‘প্রভাব খাটানোর’ ধারাবাহিকতা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এর আগে, ১৩ এপ্রিল পূর্বাচলে ৩০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিকসহ মোট ৫৩ জনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিষয়টি আলোচিত হয়। এই প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি ব্রিটিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
তবে টিউলিপের আইনজীবী এবং ঘনিষ্ঠরা এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করছেন। গত ১৪ এপ্রিল লন্ডনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি কোনো ভুল করিনি, এমন কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।” একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন- বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে।
একজন মুখপাত্র বলেন, “যদি সত্যিই বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে দুদক কেন টিউলিপের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না? তারা জানে তিনি ঢাকায় নন, তার অবস্থান লন্ডনে।”
তিনি আরও জানান, গত কয়েক সপ্তাহে দুদক কেবল দুটি চিঠি দিয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি।
বাংলাধারা/এসআর