ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ঈদযাত্রায় বৃষ্টির বাগড়া, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুন ০৫, ২০২৫, ০৫:৪২ বিকাল  

ঈদুল আজহার আগে মাত্র দুদিন ছুটি- বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। তার ওপর টানা বর্ষণ- সব মিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রা যে দুর্ভোগময় হবে, এমন শঙ্কা আগেই ছিল। সেটিই বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

ঈদের আগের দিন বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের গাজীপুর ও টাঙ্গাইল অংশে শুরু হয় দীর্ঘ যানজট। দুপুরে শিল্পকারখানা ছুটি হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। যমুনা সেতুর পূর্বপ্রান্তে টাঙ্গাইল অংশে ১৫-২০ কিলোমিটার সড়কে গাড়ির সারি নেমে আসে একেবারে স্থবিরতায়।

একই চিত্র ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়কে সকাল থেকেই গাড়ি চলছে হেলেদুলে। দুপুরের পর রাস্তা কার্যত অচল হয়ে পড়ে হাজার হাজার শ্রমিকের চাপ আর বৃষ্টির কারণে। বাস না পেয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে পশুবাহী ট্রাক বা পিকআপে বৃষ্টিতে ভিজে যাত্রা করেন।

ঢাকা ছাড়ার পথে যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। দুপুর ১২টার দিকে শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী এলাকাজুড়ে দেখা যায়, মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে হাতে ব্যাগ-বোচকা নিয়ে ছুটছেন টার্মিনালের দিকে। অথচ বাসের দেখা নেই।

মহাখালী টার্মিনাল থেকে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ছাড়ার পর একটি বাস জয়দেবপুর পৌঁছাতে সময় নেয় তিন ঘণ্টা। দুপুর ২টার দিকে সেখানে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।

ময়মনসিংহগামী ইউনাইটেড পরিবহনের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী কবিরুল ইসলাম বলেন, “চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়েছি, কিন্তু এখনো বাস আসেনি। শুনছি রাস্তায় বাস আটকে আছে।”

গাবতলী টার্মিনালেও একই অবস্থা। হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন জানান, “আমাদের উত্তরবঙ্গগামী বাসগুলো গাজীপুরের চন্দ্রা মোড়ে যানজটে আটকে পড়ছে। যমুনা সেতুর কাছেও জট রয়েছে। এতে যাত্রাপথে চার-পাঁচ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লাগছে।”

গত ঈদুল ফিতরে আগাম পাঁচদিন ছুটির কারণে যাত্রা ছিল অপেক্ষাকৃত স্বস্তির। কিন্তু এবার ঈদের আগেই ছুটি মাত্র দুদিন হওয়ায় কর্মজীবীরা একযোগে রওনা দিয়েছেন। ফলে যাত্রী ও যানবাহনের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

সড়কের পাশের কোরবানির পশুর হাট, ঢাকামুখী পশুবাহী ট্রাক, রাস্তার ওপর ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, শেষ মুহূর্তে শ্রমিকবাহী জীর্ণ বাস-ট্রাক, এমনকি সড়কে বিকল হয়ে পড়া যানবাহন- সবকিছু মিলিয়ে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

হাইওয়ে পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, এই দুরবস্থা এড়াতে ৩ জুন থেকেই ঈদের ছুটি শুরুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে বাজেট অধিবেশন ও অন্যান্য প্রশাসনিক কারণে ছুটি পিছিয়ে ঈদের পর সাতদিন দেওয়া হয়।

যাত্রী ভোগান্তি কিছুটা হলেও কম হয়েছে ট্রেনে। কমলাপুর রেলস্টেশনে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘুরে এসে সড়ক পরিবহন ও রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “যদিও শতভাগ স্বস্তি নেই, তবে যাত্রীদের কাছ থেকে বড় ধরনের অভিযোগ পাইনি।”

তিনি জানান, ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে গেছে এবং সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেই অতিরিক্ত কোচ সংযুক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কোচ যোগের আশ্বাসও দেন তিনি।

তবে ট্রেনের ছাদে ও জানালা দিয়ে যাত্রী ওঠানামা বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সায়েদাবাদ টার্মিনাল পরিদর্শন করে জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দুটি অভিযোগ পেয়েছেন তারা। দুই ক্ষেত্রেই ভাড়া ফেরত দিতে বলা হয়েছে এবং একটি বাস কোম্পানিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সকালে গাজীপুরের চন্দ্রা মোড়ে যানজট পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি জানান, একসঙ্গে বহু মানুষ যাত্রা করায় চাপ বেড়েছে। তার মতে, “যানজটের অন্যতম কারণ মহাসড়কে যাত্রী ওঠা-নামার অসংস্কৃত অভ্যাস।” এর সমাধানে বলপ্রয়োগ নয়, বরং জনসচেতনতায় জোর দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

বর্ষা, যানজট, ভাঙাচোরা রাস্তা, পশুবাহী গাড়ি আর অপ্রতুল ছুটির ফাঁদে পড়ে এবারের ঈদযাত্রা হয়ে উঠেছে দুর্ভোগময়। সরকারি কর্তৃপক্ষ নানা আশ্বাস দিলেও বাস্তবচিত্র বলছে, ঈদ আনন্দের যাত্রায় এবারও যাত্রীদের কপালে সঙ্গী হয়েছে ভেজা শরীর, দীর্ঘ অপেক্ষা ও ক্লান্তির ধকল।


বাংলাধারা/এসআর