ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকে প্রাধান্য পাবে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার: সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৫, ১০:৫০ দুপুর  

ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যে সফররত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত বৈঠকটি আগামী ১৩ জুন লন্ডনের ডোরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এই বৈঠককে ঘিরে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

বিশেষ করে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা, জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ও সম্ভাব্য সংস্কার প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে এই বৈঠককে বিশ্লেষকরা বলছেন এক ‘টার্নিং পয়েন্ট’। বিএনপির পক্ষ থেকেও এটিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকটি সম্পর্কে বলেন, “এই আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে, নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে পারে।”

ঈদুল আজহার ঠিক আগের দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘোষণার পরপরই বিএনপির স্থায়ী কমিটি জরুরি বৈঠকে বসে এবং ড. ইউনূসের প্রস্তাবিত রোডম্যাপ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে।

বৈঠকে অন্তত চারজন নেতা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নমনীয় মনোভাব পোষণ করেন, যদিও বাকি আটজন ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের দলের আগের অবস্থানেই অনড় ছিলেন। পরবর্তীতে দেওয়া বিবৃতিতে ড. ইউনূসের ভাষণকে ‘রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা ছাড়িয়েছে’ বলেও মন্তব্য করা হয়, যা দলের অভ্যন্তরেই ভিন্নমত তৈরি করে।

পরদিন বিএনপি নেতারা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে আলোচনা প্রসঙ্গে তার বার্তা ছিল, “বিরোধ নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সংকট সমাধান সম্ভব।” এরপর দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বার্তার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয় এবং দল আলোচনার মাধ্যমেই অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এই আলোচনার প্রেক্ষাপটেই লন্ডনে তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠকের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান নিজেও বৈঠকের ব্যাপারে সম্মতি জানান।

দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে তারেক রহমান মূলত তিনটি বিষয়ে আলোকপাত করবেন:

  • বিএনপির অবস্থান হলো, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হওয়া উচিত। তবে অন্তত রোজার আগে, অর্থাৎ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে হলেও সেটিকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখা হতে পারে। এই সময়সীমা বাস্তবায়নের ওপর তিনি জোর দেবেন।
  • রাজনৈতিক ঐকমত্যে যেসব সংস্কার ইতিমধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নে ড. ইউনূসকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাবেন। সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হলে তা নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই হওয়া উচিত বলেও বিএনপি মনে করে। যেসব বিষয়ে এখনো মতৈক্য হয়নি, সেগুলো পরবর্তী সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির কথা বলা হবে।
  • গত দেড় যুগে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর যে নিপীড়ন হয়েছে- গুম, খুন, হামলা ও মিথ্যা মামলা- তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন তারেক রহমান। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের ‘গণহত্যা’র বিচার নিয়ে বিএনপির অটল অবস্থান এবং সেটি কোনো আপস নয়- এই বার্তা তিনি ড. ইউনূসকে দিতে পারেন।

তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিখিত বিবরণ ড. ইউনূসকে হস্তান্তর করা হতে পারে। বৈঠকে তার দু-একজন উপদেষ্টাও উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানা গেছে।

বিএনপি মনে করছে, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের একটি পথ উন্মোচিত হতে পারে। সেইসঙ্গে তারা বিশ্বাস করে, জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে পারবেন ড. ইউনূস। বিএনপি প্রকাশ্যে বলেছে, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন চায়, এবং ড. ইউনূসের হাত ধরেই গণতন্ত্রে ফেরার পথ তৈরি হতে পারে।

একজন দায়িত্বশীল বিএনপি নেতা বলেন, তারেক রহমান শুধু নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবেন না, ড. ইউনূস যে এক ক্রান্তিকালে দায়িত্ব নিয়েছেন- সে বিষয়েও প্রশংসা জানাবেন।


বাংলাধারা/এসআর