ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল জনতা

‘আত্মসমর্পণ নয়, প্রতিরোধই আমাদের পথ’- তেহরানজুড়ে গর্জে উঠল জনতার কণ্ঠ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ১০:০৭ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলার বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষে ফুঁসে উঠেছে ইরান। রাজধানী তেহরানসহ দেশজুড়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে রোববার সকাল থেকে। বিক্ষোভে অংশ নেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও, যিনি আজাদি স্কয়ারে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

তেহরানের প্রধান স্কয়ার ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কজুড়ে হাজারো মানুষের ঢল নামে। হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, নিহত বিজ্ঞানীদের ছবি, ও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতাদের কুশপুত্তলিকা। বিক্ষোভে মুখর ছিল স্লোগান-
‘আমেরিকার আগ্রাসনের জবাব চাই’, ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ‘ইসরায়েল ধ্বংস হোক’।

অনেকে ব্যানারে লিখে এনেছিলেন:

  • ‘আমরা প্রতিরোধ করবো, আত্মসমর্পণ নয়’
  • ‘হামলা হলে জবাব আসবেই’
  • ‘পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের রক্ত বৃথা যাবে না’

আজাদি স্কয়ার, ফার্দৌসি স্কয়ার, ইমাম খোমেইনি মসজিদের প্রাঙ্গণ, এবং পার্লামেন্ট ভবনের সামনে ছিল প্রধান বিক্ষোভস্থল। এসব স্থানে জড়ো হওয়া জনতাকে উদ্বুদ্ধ করতে বক্তব্য দেন বেশ কয়েকজন ধর্মীয় নেতা ও শীর্ষস্থানীয় আলেম। কেউ কেউ এ আন্দোলনকে ‘নতুন প্রজন্মের প্রতিরোধ চেতনার উত্থান’ বলে মন্তব্য করেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই হামলা কেবল ইরানের ওপর নয়, পুরো মুসলিম বিশ্বের ওপর আঘাত। আমেরিকা বুঝতে পারছে না, ইরান কখনো মাথানত করে না।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পুরো বিক্ষোভের লাইভ সম্প্রচার করে। এতে দেশের অন্যান্য প্রান্তেও ছোট ছোট বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্লেষকদের মতে, এবারের বিক্ষোভ কেবল সরকারের পরিকল্পিত কর্মসূচি নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্রের 'অপারেশন মিডনাইট হ্যামার'–এর আওতায় ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর সাধারণ মানুষও জাতীয় চেতনায় একত্রিত হয়ে প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন।

এক রাজনীতি বিশ্লেষক বলেন, ইরানে সরকারবিরোধী মত থাকলেও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে আজ সাধারণ মানুষও সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এটা এক ধরনের সামাজিক ঐক্য, যা কৌশলগতভাবে ইরানের শক্তি হয়ে উঠতে পারে।’

রাষ্ট্রপতি পেজেশকিয়ানের অংশগ্রহণ বিক্ষোভে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। তিনি জনগণের মাঝে গিয়ে বলেন,
‘আজকের বিক্ষোভ কেবল রক্তের প্রতিশোধ নয়, এটা স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার লড়াই।’

বিক্ষোভের মাত্রা ও বিস্তৃতি দেখে আন্তর্জাতিক মহলও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ সংস্থা।

শেষ পর্যন্ত ইরানের এই বিক্ষোভ কতটা রাজনৈতিক পরিণতি বয়ে আনবে, তা সময়ই বলবে। তবে স্পষ্টতই বলা যায়- এই মুহূর্তে ইরান একটি জাতীয় ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে, আর সেই আগুনে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেই উপস্থিত হয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি।


বাংলাধারা/এসআর