ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাব

আইএমএফের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি অনুমোদনের অপেক্ষায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ১১:২৯ দুপুর  

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আজ বাংলাদেশ সময় রাতে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আশা করছে, বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে দ্রুতই বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ডলারের অর্থ ছাড় করা হবে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরনের সহায়তা পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওয়াশিংটনে আইএমএফ সদর দপ্তরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনুমোদন পেলে কয়েক দিনের মধ্যেই অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং তা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জমা পড়বে।

২০২২ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রথম আইএমএফের কাছে সহায়তা চায়। পরের বছর, ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি, কঠিন কিছু সংস্কার শর্তে আইএমএফ ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই মিলেছিল প্রথম কিস্তি। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তিও ছাড় হয়, মোট ২৩১ কোটি ডলার। কিন্তু চতুর্থ কিস্তি থেকে শুরু হয় জটিলতা।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের কথা থাকলেও আইএমএফের নির্ধারিত শর্ত পূরণ না করায় তা স্থগিত হয়ে যায়। তবে চুক্তি বাতিল না করে দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে মে মাসে সমঝোতায় পৌঁছায়। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের বৈঠকে নতুন করে দুই কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলোর মধ্যে ছিল ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, ভর্তুকি হ্রাস, ব্যাংক খাত সংস্কার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামে বাস্তবতার প্রতিফলন এবং কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ।

বাংলাদেশ ব্যাংক এরইমধ্যে ডলারের বিনিময় হার বাজারনির্ভর করেছে, যার ফলে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) বড় ধরনের সংস্কার আনা হয়েছে। ভর্তুকি কিছুটা কমানো হয়েছে এবং ব্যাংক খাতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার পরিকল্পনার খসড়া আইএমএফকে জানানো হয়েছে।

তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা সংযম দেখিয়েছে। চলমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় জানান, আপাতত বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না।

মুদ্রানীতির ক্ষেত্রে আইএমএফের চাওয়া ছিল কড়াকড়ি আরোপ, যাতে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকও তা অনুসরণ করছে। গভর্নর সম্প্রতি জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার টার্গেট রয়েছে। সেটি অর্জিত হলে সুদের হারও কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট এবং ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় সামাল দিতে আইএমএফের এ সহায়তা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জন্য। ঋণের পরবর্তী কিস্তির অর্থ ছাড় হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ খানিকটা স্বস্তি পাবে, যা আমদানি দায় মেটানো এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধু ঋণ নয়, বরং আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বাস্তবভিত্তিক অর্থনৈতিক সংস্কারগুলো দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে পারে। তবে তা যেন সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট না করে-সেদিকেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

 

বাংলাধারা/এসআর