এনবিআরের পাঁচ কর্মকর্তার হঠাৎ বদলি: সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নতুন উত্তেজনা
প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ১১:৫২ দুপুর

ফাইল ছবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পাঁচ উপ-কর কমিশনারকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করেছে। রোববার (২২ জুন) জারি করা এক অফিস আদেশে জানানো হয়, বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের সোমবারের মধ্যেই বর্তমান দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বদলি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন-
- শাহ্ মোহাম্মদ ফজলে এলাহী: আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট থেকে ময়মনসিংহ কর অঞ্চলে বদলি। একইসঙ্গে তার ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)’-এর উপপরিচালক পদে সংযুক্তিও বাতিল করা হয়েছে।
- মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম: ঢাকা কর অঞ্চল-১৬ থেকে খুলনা কর অঞ্চলে।
- মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফ: এনবিআরের প্রধান কার্যালয় থেকে বগুড়া কর অঞ্চলে।
- ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল: আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট থেকে কুমিল্লা কর অঞ্চলে।
- নুশরাত জাহান শমী: কুমিল্লা কর অঞ্চল থেকে রংপুর কর অঞ্চলে।
আদেশে আরও বলা হয়, নির্দেশনা অমান্য করলে সোমবার দুপুরের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।
এই হঠাৎ বদলিকে প্রশাসনিক রুটিন নয়, বরং ‘সংস্কারবিরোধী পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এটি কোনো স্বাভাবিক বদলি নয়। এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে এনবিআরের সংস্কারপন্থী অংশকে দুর্বল করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তারা। ঢাকাসহ সারা দেশের এনবিআর অফিসে এ কর্মসূচি চলছে। এই কর্মসূচির অন্যতম দাবি- বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ।
গত ১২ মে সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠন করে। এরপর থেকেই এই বিভাজন বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অর্থ মন্ত্রণালয় আলোচনার আশ্বাস দিলে আন্দোলন সাময়িকভাবে শিথিল হলেও, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় ঐক্য পরিষদ। তারা চেয়ারম্যানকে এনবিআরে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে। যদিও তিনি স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছেন, কিন্তু কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার দূরত্ব এখনো বিদ্যমান।
বর্তমানে এনবিআরের ভেতরে একটি গভীর প্রশাসনিক সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একদিকে সরকার রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারে উদ্যোগী, অন্যদিকে এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। এই সময়ে বিতর্কিত বদলিগুলো নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে এনবিআরের অভ্যন্তরে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকটকে শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখলে চলবে না, বরং এটি একটি গভীর বিশ্বাসঘাতকতা ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের ইঙ্গিতও বহন করে।
বাংলাধারা/এসআর