মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে ব্যাহত করছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৫, ০৩:৩৭ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
দেশে মাদকের আগ্রাসন শুধু জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি নয়, এটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে ব্যাহত করছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যুবসমাজ যদি মাদকের নেশায় নিপতিত হয়, তবে কোনো জাতিই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন করতে পারে না।’
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ আয়োজনের উদ্যোগ নেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
উপদেষ্টা বলেন, “মাদকের অবৈধ পাচার ও ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা এবং অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। এই আগ্রাসনের কারণে আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রমে বড় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। একটি জাতির মূল চালিকাশক্তি হলো তার দক্ষ ও কর্মক্ষম যুবসমাজ। তাদের যদি আমরা মাদক থেকে রক্ষা না করতে পারি, তাহলে উন্নয়ন শুধু কাগজে থাকবে, বাস্তবে নয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, নারী, শিশু ও কিশোরদেরও মাদক চোরাচালানে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে এবং এদের একটি বড় অংশ আসক্ত হয়ে পড়ছে।”
এই সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গঠন করা হয়েছে মাদকবিরোধী কমিটি, যারা সভা, সেমিনার, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করছে। পাশাপাশি জেলা-উপজেলায় সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিনথেটিক ও সেমি-সিনথেটিক ড্রাগসের প্রসার ঘটেছে, যা বাংলাদেশেও অনুপ্রবেশ করেছে। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “নতুন ধরনের এসব মাদকের বিস্তার ঠেকাতে আমাদের কৌশলগত প্রস্তুতি বাড়াতে হচ্ছে। নতুন মাদককে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নতুন মাদক প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালী না হওয়াকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তার ভাষায়, “১৮ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে বর্তমানে নিয়োজিত জনবল মাত্র ২ হাজার ৯৪৩ জন। এর মধ্যে এনফোর্সমেন্টে রয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৬২২ জন।”
এই জনবল দিয়ে ৬৪টি জেলা কার্যালয়, ৮টি বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয় এবং অন্যান্য ইউনিট পরিচালনা করতে গিয়ে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি যে, সমাজের ভেতরে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রবণতা কমে গেছে। সামাজিক প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর ও স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা হতে পারে। তাই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, “বাংলাদেশে মাদক উৎপাদন হয় না। কিন্তু আমাদের বিশাল সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবেশ করে। আমরা নিজেরাই পয়সা দিয়ে বিদেশিদের মাদক কিনে নিজেদের ধ্বংস করছি।”
তিনি জানান, দেশে ৩২টি জেলা সীমান্তবর্তী- এই এলাকাগুলোর মানুষকে সম্পৃক্ত করে মাদক প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “সরকারিভাবে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ। তিনি বলেন, “সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া মাদকের বিস্তার রোধ করা যাবে না। আমাদের সবাইকে—সরকার, সমাজ, পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
বাংলাধারা/এসআর