ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ০১:২৩ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

বহুল আলোচিত ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবর-সহ সব আসামির খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন।

আদালতে বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল-সহ অনেকে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগ ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর-সহ সকল আসামিকে খালাস দেন। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে এই রায় দেন। হাইকোর্ট রায়ে উল্লেখ করেন যে, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার প্রক্রিয়া ছিল অবৈধ এবং আইনত তা গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে, যে চার্জশিটের ভিত্তিতে নিম্ন আদালত বিচার কাজ সম্পন্ন করেছিলেন, সেটি আইনগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ ছিল। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল দায়ের করে।

মামলার প্রেক্ষাপট ও নিম্ন আদালতের রায়

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু-সহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। একই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ-সহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন:

লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, মো. হানিফ, মাওলানা তাজউদ্দীন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ এবং মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন:

শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর, আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।

ভয়াবহ ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এই নৃশংস হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান-সহ ২৪ জন নিহত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ আওয়ামী লীগের কয়েকশ' নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। তাদের অনেকেই আজও শরীরের স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন এবং অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।

এই মামলার আপিল শুনানি বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাধারা/এসআর