ইসরায়েলের সিরিয়া ও লেবাননে ব্যাপক হামলা
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ০৬:৫৯ বিকাল

ছবি: সংগৃহিত
মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সিরিয়া ও লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় একযোগে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এসব হামলা চালানো হয় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর অবস্থানে। ইসরায়েলের দাবি, উত্তরের সীমান্ত নিরাপদ রাখতে এই অভিযান চালানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা প্রদেশে বেদুইন ও দ্রুজ মিলিশিয়াদের মধ্যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিরিয়ার নতুন সরকার সেখানে সেনা পাঠিয়েছিল। তবে এই বাহিনী সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে উল্টো লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, যার ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের একটি জোট নতুন সরকার গঠন করে। এই নতুন সরকারের বিরুদ্ধে এটিই ইসরায়েলের প্রথম সরাসরি হামলা।
সুয়েইদা এলাকাটি ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী একটি সিরীয় ভূখণ্ড এবং এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্রুজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ইসরায়েল বরাবরই দ্রুজদের নিরাপত্তার অজুহাতে এই অঞ্চলে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে। সুয়েইদা সিরিয়ার দ্রুজদের প্রধান ঘাঁটি হওয়ায় সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ইসরায়েল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রর মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও সিরিয়ার নতুন সরকারের মধ্যে সীমিত কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল সীমান্ত উত্তেজনা কমানো। কিন্তু মঙ্গলবারের এই বিমান হামলা সেই আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
একই দিনে ইসরায়েল লেবাননের বেকা উপত্যকায় ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতেও বিমান হামলা চালায়। এই অঞ্চলটি হিজবুল্লাহর অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
লেবাননের কর্মকর্তারা বলছেন, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে ইসরায়েল ধারাবাহিক চাপ তৈরি করছে। গত নভেম্বর মাসে লেবাননে সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধের পর একটি হালকা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার অন্যতম শর্ত ছিল হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ। মঙ্গলবারের এই হামলা সেই চুক্তিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, "এই হামলা হিজবুল্লাহ এবং লেবাননের সরকার—উভয়ের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা। ইসরায়েল তার সামরিক শক্তি পুনর্গঠনের যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া জানাবে।"
সবমিলিয়ে, ইসরায়েল, সিরিয়া এবং লেবাননের মধ্যে জটিল রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বর্তমানে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিশেষত সিরিয়ার দ্রুজ অঞ্চল ও লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর একযোগে হামলা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সামনে আরও সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিরসনে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হবে, এখন সেটিই দেখার বিষয়।
বাংলাধারা/এসআর