ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৩০ ঘণ্টার অবরোধে স্থবির কাকরাইল, তীব্র যানজটে নাকাল জনজীবন

বাংলাধারা রিপোর্ট:

 প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০৬:০৬ বিকাল  

ছবি: সংগৃহিত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টানা ৩০ ঘণ্টার অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা কাকরাইল। চার দফা দাবিতে বুধবার দুপুর ১টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর ফলে আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং তারা সড়ক ছাড়বে না। এ অবস্থানে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, “দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্যাম্পাসে ফিরছি না। বিশ্ববিদ্যালয় এখন শাটডাউনের মধ্যে।”

অবরোধের কারণে মৎস্য ভবন, মিন্টু রোড, পল্টন, গুলিস্তান ও শাহবাগসহ কাকরাইলের আশপাশের প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল প্রায় অচল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা বিকল্প রাস্তায় যেতে বাধ্য হন। এ সময় ভারী বর্ষণ যানজটের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তোলে।

যদিও শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে অবরোধ অব্যাহত রেখেছে, তবে মানবিক বিবেচনায় অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে তারা। আন্দোলনকারীরা জানান, কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবক দল সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে, যাতে কোনো রোগী কিংবা জরুরি প্রয়োজনে থাকা যানবাহন আটকে না পড়ে।

দীর্ঘ যানজটে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগের কথা জানাচ্ছেন যাত্রীরা। জেসমিন আরা নামের এক নারী বলেন, “প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে কাকরাইল মোড়ে গাড়ির ভেতর বসে আছি। হাসপাতালে যেতে হবে, আমার ভাই ভর্তি আছেন। কিন্তু গাড়ির চাকা নড়ছে না।”

একইভাবে, জান্নাতুল নাইম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমার বন্ধু অ্যাকসিডেন্ট করেছে। ওকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু এক জায়গায় দুই ঘণ্টা আটকে থেকে শেষমেশ হেঁটেই রওনা দিয়েছি।”

শিক্ষার্থীরা যে চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছে, তা হলো:

  • ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা চালু করা,
  • প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট থেকে কোন ধরনের কাটছাঁট না করে তা অনুমোদন দেওয়া,
  • দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাশ ও দ্রুত বাস্তবায়ন,
  • ১৪ মে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

এই দাবিগুলো নিয়ে গত বুধবার সকাল ১১টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একটি লং মার্চ শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের উদ্দেশে। গুলিস্তান, মৎস্য ভবন হয়ে মিছিলটি কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, গরম পানি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে অন্তত শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হন বলে জানা গেছে।

দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান নিয়েছেন জবি শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, "এটা শুধুমাত্র চারটি দাবির আন্দোলন নয়, এটি আমাদের শিক্ষাজীবন, মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্ন। প্রশাসনের উচিত দ্রুত আলোচনায় বসা ও সমাধানে এগিয়ে আসা।"

বাংলাধারা/এসআর