গোপালগঞ্জে এনসিপি সভাস্থল ও বহরে হামলা: তিন মামলায় ২ হাজার ৬০০ আসামি, গ্রেপ্তার ১৬৭
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৭:৩৩ সকাল

ফাইল ছবি
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশস্থল ও নেতাদের গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত দুই দিনে অন্তত তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ২ হাজার ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ নিশ্চিত করেছে, এ সময় অন্তত ১৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৪৮ জনকে গতকাল শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া অনেকের পরিবারের সদস্যরা শুক্রবার সদর থানার সামনে ভিড় জমায়। সমকাল ১৬ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে, এর মধ্যে ছয়টি পরিবার অভিযোগ করেছে যে তাদের কিশোর সন্তানদের আটক করা হয়েছে। আটক অন্যদের অধিকাংশই তরুণ- কেউ রিকশাচালক, কেউ কারখানার শ্রমিক বা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কাজ করেন। পরিবারগুলোর দাবি, তারা রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত নন এবং সম্পূর্ণ নির্দোষ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অভিযান) ড. রুহুল আমিন সরকার জানান, “সন্দেহভাজনদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অপরাধের প্রমাণ মিললেই কেবল গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।”
এনসিপির কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘর্ষে গত বুধবার গুলিবর্ষণে চারজন নিহত হন। এরপর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা গেলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচে। নিহতরা সবাই তরুণ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বুধবার রাত ৮টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে, যা শুক্রবার জুমার নামাজের সময় কয়েক ঘণ্টার জন্য শিথিল করা হয়েছিল।
সদর থানায় পুলিশের গাড়ি পোড়ানো ও হামলার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে। গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আহম্মেদ আলী বাদী হয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আতাউর পিয়ালসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন। এছাড়া ৪৫০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪৮, মুকসুদপুরে ৬৬, কাশিয়ানীতে ২৪, টুঙ্গিপাড়ায় ১৭ এবং কোটালীপাড়ায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কোটালীপাড়া: সড়ক অবরোধের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় ১,৬৫৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, এর মধ্যে ১৫৫ জনের নাম উল্লেখ আছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১২ জন।
কাশিয়ানী: সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলায় ৭০ জনের নামসহ ২৫০-৩৫০ জন অজ্ঞাত আসামি। গ্রেপ্তার ২৪ জন।
১৬ বছরের কিশোর আবীর হোসেন শুভকে বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। শুভর মা আফরোজা আক্তার জানান, “ওষুধ কিনতে গিয়েছিল ছেলে। হাতে ওষুধ নিয়েই তাকে ধরে আনে পুলিশ।” শুভর ছোট ভাই জাইন (৩) থানার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার বলছিল, “মা ভাইয়া আসে না ক্যান?”
এমনই পরিস্থিতি ৫ বছরের সামিয়ারও। সে বাবার জন্য নতুন কাপড় নিয়ে থানার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সামিয়ার বাবা শামীম শেখ (২২), একজন বিস্কুট কারখানার শ্রমিক, কাজ শেষে ফেরার পথে আটক হন।
এছাড়া নবম ও অষ্টম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী হাম্মাদুল ইসলাম রিপন (১৪) ও কাজী মোকাররম হোসেন (১৩) আটক হয়েছেন। রিপনের মা বলেন, “ছেলেটার পরীক্ষা চলছে, এখন কী হবে জানি না।”
বয়সী মানুষরাও ছাড়া পাননি।
>> দেলোয়ার হোসেন (৬০): মাছ ব্যবসায়ী, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরার পরও গ্রেপ্তার।
>> মোদক হালদার (৭০): কৃষক, চা খেতে গিয়ে আটক।
>> ইয়াছিন শেখ (২৪): ওয়ার্কশপ শ্রমিক, গোসলের সময় ভেজা শরীরে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
অটোরিকশাচালক ওসমান গনি, ইশা খন্দকার এবং ইজিবাইক চালক আরমান হোসেনসহ আরও কয়েকজন শ্রমজীবী তরুণ গ্রেপ্তার হয়েছেন। পরিবারগুলোর দাবি, তারা সবাই নির্দোষ।
বাংলাধারা/এসআর