ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধনে সরকার অধ্যাদেশ জারি, বাড়ছে কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৫, ১০:৩৬ দুপুর  

ফাইল ছবি

সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-কে সময়োপযোগী করতে সরকার নতুন করে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। রোববার (১১ মে) রাতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে এ অধ্যাদেশ জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর ফলে আইনটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারায় পরিবর্তন এনে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে আরও কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের পথ খুলেছে।

বর্তমানে সংসদ অধিবেশন না থাকায় সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি এ অধ্যাদেশ জারি করেছেন, যা ইতোমধ্যে সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮ এবং ২০-এ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনের ফলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংগঠনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আরও জোরদার হয়েছে।

১. সত্ত্বার যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুযোগ:
ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১)-এ যুক্ত হয়েছে, কোনো সংগঠন বা সত্ত্বাকে শুধু নিষিদ্ধ ঘোষণাই নয়, প্রয়োজনে তার সব ধরনের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যাবে।

২. ধারা ২০-এর সংশোধনে নজরদারি বাড়ানো:
ধারা ২০-এর ভাষা আরও বিস্তৃত করে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা সত্ত্বার বিরুদ্ধে ধারা ১৮ এর অধীন যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে তার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

এছাড়া একাধিক দফায় শব্দ পরিবর্তনের মাধ্যমে আইনের প্রয়োগ ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। যেমন:

  • ‘নিষিদ্ধ’ শব্দের পরিবর্তে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ‘উক্ত’- যা শুধুমাত্র নিষিদ্ধ নয়, সংশ্লিষ্ট সত্তার যাবতীয় কার্যক্রমের দিকেও নজর দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।
  • একদম নতুনভাবে সংযোজিত হয়েছে, কোনো সত্তার পক্ষে বা সমর্থনে প্রেস বিবৃতি, অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, সভা-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন বা জনসম্মুখে বক্তৃতা দেওয়াও নিষিদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে।

এই পরিবর্তনগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করবে, যার মাধ্যমে তারা দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তির বিকাশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসার এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রচার-প্রচারণা পরিচালনার কারণে আইনটির কিছু ধারা যুগোপযোগী ছিল না। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সেই ঘাটতিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

তবে, এই পরিবর্তনের ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, ‘উক্ত সত্তার পক্ষে’ এমন যে কোনো বক্তব্য বা প্রচার নিষিদ্ধ করা হলে, তার অপব্যবহারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে আইনের আধুনিকায়ন প্রয়োজনীয় হলেও, এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের উচিত হবে পরিস্কার নীতিমালা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, যাতে করে আইন প্রয়োগের সময় কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন না ঘটে।

 

বাংলাধারা/এসআর