ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, আতঙ্কে জাজিরার ৬০০ পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ০৯, ২০২৫, ০৩:৩৫ দুপুর  

ছবি: বাংলাধারা

বর্ষা শুরু হতেই শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভাঙনে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে অন্তত ২৬টি বসতঘর, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পরিস্থিতির অবনতিতে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে জাজিরার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের প্রায় ৬০০ পরিবার।

স্থানীয় সূত্র ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই নদীর পাড় ছেড়ে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। স্থানীয়দের শঙ্কা, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভাঙন শুরুর পর থেকে বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত রক্ষা বাঁধের প্রায় ১৩০ মিটার অংশ পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি ভিত্তিতে নদীপাড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় এক হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০১০-২০১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলম খার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে। তবে গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় বাঁধে ধস দেখা দেয়।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ ধসে পড়লে কংক্রিটের সিসি ব্লক পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং আশপাশের এলাকায় ফাটল দেখা দেয়। পরবর্তীতে বাঁধ সংস্কারের দায়িত্ব নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই সময় ১০০ মিটার অংশ মেরামতে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ এবং সিসি ব্লক ফেলার কাজ করা হয়।

কিন্তু চলতি বছরের ঈদের দিন ভোররাতে সংস্কারকৃত সেই ১০০ মিটার অংশের পাশেই নতুন করে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়। মাত্র একদিনেই বাঁধের আরও ২৫০ মিটার নদীতে তলিয়ে যায়। এরপর দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নতুন করে জিও ব্যাগ ফেলতে বাধ্য হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সর্বশেষ, গত সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে ফের ভাঙন শুরু হয়। মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে নদীতে বিলীন হয় আরও ১৬টি বসতবাড়ি এবং ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আশঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ১৫টি দোকান।

মঙ্গল মাঝির ঘাট বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, অকস্মিক ভাঙনে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাই পরিবারের সদস্যরাই নিজেরা মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে। আমরা চাই, সরকার দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিক।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন হাওলাদার জানান, নদীর স্রোতের গতিপথ বদলে পাড়ের কাছে চলে আসায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত বছর থেকেই এ এলাকায় ভাঙন চলছে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শত শত পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, রক্ষা বাঁধের ১৩০ মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। ইতোমধ্যেই কিছু বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে আমরা ৯০ জন শ্রমিক নিয়ে দিনরাত কাজ করছি। এক হাজারের বেশি জিও ব্যাগ ফেলেছি। আরও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় জানান, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া ২৬টি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি পুরোপুরি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে, তাদের দুই বান টিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিয়েও প্রশাসন কাজ করছে।

স্থানীয়রা দ্রুত ও টেকসই সমাধানের দাবি জানিয়েছেন, যেন পদ্মা পাড়ের এই ভয়াবহ ভাঙন থেকে এলাকা এবং মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যায়।

 

বাংলাধারা/এসআর