রৌমারী সীমান্তে উত্তেজনা: গুলির পর এবার ড্রোন ওড়াচ্ছে বিএসএফ
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৫, ১১:৪৬ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে ফের নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। পুশইনের ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) চার রাউন্ড গুলি চালানোর পর এবার সীমান্ত আকাশে দেখা গেছে বিএসএফের একটি ড্রোন। মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে বড়াইবাড়ী সীমান্তে ড্রোনটি উড়তে দেখা যায় বলে নিশ্চিত করেছেন সেখানে দায়িত্বরত বিজিবি কর্মকর্তারা।
বড়াইবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আঞ্জু মিয়া জানান, ড্রোনটি ভারতের দিক থেকে উড়ে এসে সীমান্ত এলাকায় চক্কর দেয়। এ ধরনের আচরণ সরাসরি সীমান্ত আইন ও আঞ্চলিক সৌহার্দ্যবিরোধী।
এর আগে মঙ্গলবার ভোরে রৌমারী সদর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ী সীমান্তে বিএসএফ ১৪ জন নারী-পুরুষকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় - যাকে পুশইন বলা হয়। বিজিবি সদস্যরা ভারতীয় নাগরিকদের সীমান্তের শূন্যরেখায় আটকে দিলে বিএসএফ সদস্যরা উল্টো উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং চার রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
এ ঘটনার পর পরই বিজিবি সতর্ক অবস্থান নেয় এবং ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে। পাশাপাশি আশপাশের গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষ ভিড় জমায় সীমান্তের শূন্যরেখায়। বড়াইবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, “আমরা হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে যাই। তারপর দেখি অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি।”
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় আসাম রাজ্যের মানকারচর থানার কাকরিপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ১০৬৭-এর ১ সাব এলাকায় এ পুশইন ঘটায়। এ ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গের স্পষ্ট উদাহরণ, যা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য হুমকি স্বরূপ।
স্থানীয়রা জানান, বিএসএফের ড্রোন সীমান্তে উড়তে দেখা যাওয়ার পর তাদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসী আতঙ্কে আছেন - না জানি আর কী হয়! বড়াইবাড়ী হাইস্কুলের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, “একটা গুলি বা পুশইনের ঘটনা হতেই পারে, কিন্তু এখন যদি ড্রোন চালায়, তাহলে আমরা বুঝব কী উদ্দেশ্যে ওরা এসব করছে?”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ড্রোন তৎপরতা শুধু নজরদারির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তথ্য সংগ্রহ কিংবা মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
এই ঘটনার পর বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। কূটনৈতিক পর্যায়েও বিষয়টি উত্থাপনের জন্য বিজিবি সদর দপ্তর থেকে তথ্য পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মানবাধিকারকর্মীরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বারবার পুশইন ও গুলি চালনার ঘটনা সীমান্তের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত এই ধরনের ঘটনা রোধে কূটনৈতিকভাবে কড়া বার্তা দেওয়া।
বাংলাধারা/এসআর