ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

নীরব প্রিয়দর্শিনী: মৌসুমী কি বিদায়ের পথে?

বিনোদন ডেস্ক:

 প্রকাশিত: মে ০৪, ২০২৫, ১২:১৪ দুপুর  

একসময় তাঁর একটুখানি হাসি, চোখের চাহনি কিংবা চুল সরানোর নিঃশব্দ ভঙ্গিমাও ভক্তদের হৃদয়ে জায়গা করে নিত। তিনি মৌসুমী- বাংলা সিনেমার ‘প্রিয়দর্শিনী’। শুধু অভিনয় নয়, সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব আর কোমল আচরণ দিয়ে কোটি মানুষের ভালোবাসা কেড়েছেন তিনি।

মৌসুমী এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। মায়ের অসুস্থতা ও মেয়ের পড়াশোনার জন্য পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। দুই বছর ধরে পর্দার বাইরে। নেই ক্যামেরার ঝলক, নেই শুটিং সেটের কোলাহল। আর মেকআপ রুমের আয়নায় প্রতিফলিত হয় না সেই চিরচেনা মুখ। আছেন নিজের মতো করে- নীরবে, আপনজনের সঙ্গে।

ওমর সানী- পর্দার নায়ক, বাস্তবে জীবনসঙ্গী। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন এক গভীর বাস্তবতা:
“মৌসুমী ভুলে যেতে চাইছে, সে কখনও মৌসুমী ছিল।”

এই বাক্যে ধরা পড়ে এক প্রকার গভীর নীরবতা। একসময় যিনি আলো হয়ে উঠতেন সিনেমা হলের অন্ধকার ভেদ করে, তিনিই আজ নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন সময়ের আড়ালে।

তাহলে কি মৌসুমী সত্যিই বিদায় নিচ্ছেন? নাকি সময়ের প্রয়োজনেই এই বিরতি? হয়তো একসময় মানুষ নিজের সাথেই প্রশ্ন করে- “আর কতদূর?”, “কী পেলাম?”, “আর কী চাই?” মেয়ের পড়া, অসুস্থ মা, পারিবারিক টানাপড়েন- এসব হয়তো একেকটি ব্যাখ্যা, যদিও ‘বিদায়’ বলার জন্য যথেষ্ট নয়।

তবু প্রশ্ন থেকেই যায়, একজন মৌসুমী কি হারিয়ে যেতে পারেন? তিনি তো শুধুই একজন অভিনেত্রী নন, ছিলেন এক সময়ের আবেগ, এক প্রজন্মের ভালোবাসা।

নতুন প্রজন্ম হয়তো তাঁর নাম জানে, ছবিগুলোর পোস্টার দেখে, ইউটিউবে গান শোনে। কিন্তু তারা কি জানে সেই সৌম্য সৌন্দর্য, সেই মায়ার পর্দা, যে পর্দার দিকে তাকিয়ে দর্শকরা বাস্তব ভুলে যেত?

কেউ বলেছিলেন, যদি কোনো অভিনেতা তাঁর চরিত্রের চেয়েও বড় হয়ে ওঠেন, তবে সে-ই কিংবদন্তি।”
মৌসুমী ছিলেন তেমনই একজন।

১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে যাত্রা শুরু। সালমান শাহর সঙ্গে তাঁর রসায়ন দিয়েই বাংলা সিনেমায় এক নতুন যুগের সূচনা হয়। সেই সময়কার প্রেম, কান্না, ভালোবাসা, সবকিছুতেই তিনি ছিলেন পূর্ণ। সিনেমায় একেকটা দৃশ্য যেন হয়ে উঠত দর্শকের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।

আজ তিনি হয়তো নিজেকে আড়ালে রাখছেন, তবে দর্শকের হৃদয়ে রয়ে গেছেন চিরন্তন। যারা মৌসুমীর সিনেমা দেখে বড় হয়েছেন, যারা এখনও তাঁর ছবির গান শুনে একা রাতে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকেন, তাদের কাছে আজকের মৌসুমী যেন এক হারিয়ে যাওয়ার গল্প।

হয়তো এই বিরতিই তাঁর প্রয়োজন ছিল। হয়তো তিনি আর ফিরবেন না। কিংবা একদিন হঠাৎই ফিরবেন—একটি সংলাপ, একটি দৃষ্টি, একটি নিঃশ্বাস নিয়ে।

তবু যদি না-ই ফেরেন, মৌসুমী যেন ঠিক সেখানেই থাকেন- ভক্তদের স্মৃতির গহিনে, আবেগের মেঘলা বিকেলে, অথবা একটা পুরোনো গানের পাশে, যেখানে লেখা থাকবে- “তুমি আমারই ছিলে, আমি জানি।”

 

বাংলাধারা/এসআর