অবশেষে আনচেলত্তির অধ্যায় শুরু: নেইমারহীন ব্রাজিলের বিশ্বকাপ অভিযাত্রা
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৫, ১২:১১ দুপুর

ফাইল ছবি
ব্রাজিল ফুটবলে শুরু হয়েছে নতুন এক যুগ। ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হাল ধরেছেন ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সফলতম কোচদের একজন, কার্লো আনচেলত্তি। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব সামনে রেখে প্রথম স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন এই ইতালিয়ান কোচ। তবে সবচেয়ে বড় চমক- দলে নেই দেশের সবচেয়ে বড় পোস্টার বয়, নেইমার জুনিয়র।
তাঁর না থাকা নিয়ে গুঞ্জনের কমতি নেই। তবে আনচেলত্তি নিজেই বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। বলেছেন, নেইমার ইনজুরি থেকে ফিরেছে বটে, কিন্তু এখনো পুরোপুরি ফিট নয়। আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি, ও নিজেও জানে এখনই মাঠে ফেরার উপযুক্ত সময় নয়। আমাদের লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি।
আনচেলত্তির এই স্কোয়াড মূলত অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের এক চমৎকার মিশ্রণ। আগামী ৫ জুন ইকুয়েডরের এবং ১০ জুন প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচকে সামনে রেখে ঘোষিত ২৫ সদস্যের দলে রয়েছে বেশ কিছু পরিচিত মুখ, আবার দেখা মিলেছে ভবিষ্যতের তারকাদেরও।
মাঠের অভিজ্ঞ যোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছেন মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরো, রক্ষণভাগের ভরসা মার্কিনিয়োস এবং গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী আলিসন। অন্যদিকে আক্রমণভাগে আছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিচার্লিসন, রাফিনিয়া, ও তরুণ এস্তেভাও।
দলে ডাক পাওয়া তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম ১৭ বছর বয়সী এস্তেভাও। পামেইরাসের এই তরুণ ফরোয়ার্ড ইতোমধ্যে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর নজর কেড়েছেন তাঁর গতিময় খেলা ও নিখুঁত ফিনিশিং দক্ষতায়। মিডফিল্ডে যুক্ত হয়েছেন আরেক তরুণ প্রতিভা, চেলসিতে খেলা আন্দ্রে সান্তোস।
আনচেলত্তি জানিয়েছেন, “আমার লক্ষ্য শুধু ২০২৬ বিশ্বকাপ নয়, তার বাইরেও ব্রাজিলকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা। এজন্য দরকার ভারসাম্যপূর্ণ দল- যেখানে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্য একসাথে পথচলা শুরু করবে।”
আনচেলত্তির স্কোয়াড এক নজরে:
গোলরক্ষক: আলিসন (লিভারপুল), বেন্তো (অতলেটিকো পারানান্সে), হুগো সাউজা (ভাস্কো দা গামা)
ডিফেন্ডার: ডানিলো, ভ্যান্ডারসন, আলেক্স সান্দ্রো, কার্লোস অগুস্টো, ওয়েসলি, আলেক্সসান্দ্রো, বেরালদো, লিও ওর্তিজ, মার্কিনিয়োস
মিডফিল্ডার: আন্দ্রেয়াস পেরেইরা, আন্দ্রে সান্তোস, ব্রুনো গিমারায়েস, ক্যাসেমিরো, এডেরসন, জেরসন
ফরোয়ার্ড: আন্তনি, এস্তেভাও, মার্তিনেল্লি, কুনহা, রাফিনিয়া, রিচার্লিসন, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র
নেইমারকে স্কোয়াডের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত ব্রাজিল ফুটবলের একটি নতুন যুগে প্রবেশের স্পষ্ট বার্তা। এই সিদ্ধান্ত কেবল একটি ইনজুরি পরিস্থিতি নয়, বরং এটিকে দেখা যেতে পারে ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টিপাত হিসেবে। ৩৩ বছর বয়সী নেইমার বর্তমানে আল হিলাল ক্লাবে খেলছেন, কিন্তু বারবার ইনজুরিতে পড়ায় তার ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।
আনচেলত্তির প্রথম দুই ম্যাচই হবে কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। ইকুয়েডর ও প্যারাগুয়ে- দুটি দলই দক্ষিণ আমেরিকায় নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। নতুন কোচের অধীনে ব্রাজিল কেমন পারফরম্যান্স করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তবে একটি বিষয় নিশ্চিত- এই দল শুধু আগামী দুই ম্যাচ নয়, ২০২৬ বিশ্বকাপের দিকেই তাকিয়ে আছে। আর সে যাত্রা শুরু হলো এক সাহসী সিদ্ধান্ত দিয়ে- নেইমার ছাড়া ব্রাজিল।
কার্লো আনচেলত্তি এসেছেন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। ক্লাব ফুটবলে তাঁর অভিজ্ঞতা অগাধ—রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি, পিএসজি, এসি মিলান, বায়ার্ন মিউনিখ- সবখানেই তিনি সফল। এবার দেখার পালা, তিনি কী পারেন ব্রাজিলকেও ষষ্ঠবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বানাতে।
তাঁর প্রথম স্কোয়াডই বলে দিচ্ছে, তিনি রক্ষণশীল নন- তরুণদের ওপর ভরসা করতে জানেন। সেলেসাও ভক্তরা এখন সেই নতুন স্বপ্নেই বিভোর- আনচেলত্তির ছোঁয়ায় জেগে উঠুক ব্রাজিল, ফুটবলের রাজত্বে ফিরুক আবার।
নেইমার না থাকলেও আনচেলত্তির ব্রাজিল দল শক্তিশালী, ভারসাম্যপূর্ণ এবং প্রতিশ্রুতিশীল। আগামী জুনে মাঠে গড়াবে বাস্তব পরীক্ষা। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের সেই পুরনো দাপট কি ফিরবে? সময়ই দেবে উত্তর।
বাংলাধারা/এসআর