ক্রিকেটে মাদক কেলেঙ্কারি: ইয়ান বোথাম থেকে রাবাদা
প্রকাশিত: মে ০৫, ২০২৫, ১১:২৩ দুপুর

ছবি: বাংলাধারা
সততা, শৃঙ্খলা আর প্রতিশ্রুতির খেলাই ক্রিকেট। অথচ সেই মাঠে মাঝেমধ্যে ছায়া ফেলে অন্ধকার জগতের এক নিষিদ্ধ অধ্যায়- মাদক। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ব্যথানাশক বা শক্তিবর্ধক ওষুধের অপব্যবহার হোক কিংবা নিছক বিনোদনের খাতিরে হোক, বেশ কিছু ক্রিকেটার বারবার জড়িয়ে পড়েছেন মাদক গ্রহণের কেলেঙ্কারিতে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার গতিময় পেসার কাগিসো রাবাদা।
মাত্র ২৯ বছর বয়সী এই তরুণ পেসারের চোখে এখনও যেন কিশোর মেঘের ছায়া। মাঠে বল হাতে তীক্ষ্ণ আগ্রাসন থাকলেও কখনোই তাকে সেলিব্রেশনে মাত্রা ছাড়াতে দেখা যায়নি। অথচ হঠাৎ করেই তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন এক বিতর্কের মুখোমুখি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাদকবিরোধী সংস্থা সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাবাদাকে। এখনো চূড়ান্ত শাস্তির মেয়াদ জানা না গেলেও আগামী সপ্তাহে জানা যেতে পারে, কতদিন মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে।
রাবাদা ইতোমধ্যেই ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছেন, আমি ভুল করেছি। ক্রিকেট আমার কাছে শুধু একটা খেলা নয়, এটা আমার জীবনের সম্মান আর সুযোগ। আমি মাঠে ফেরার জন্য অপেক্ষা করব।
ক্রিকেটে মাদক কেলেঙ্কারির ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়, তবে ঘটনাগুলো বরাবরই বড়সড় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রথমবার এই ইস্যু সামনে আসে ১৯৮৭ সালে, যখন গাঁজা সেবনের দায়ে ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথামকে দুই মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। সেই ঘটনাটি ছিল ক্রিকেটে ডোপিং সংক্রান্ত প্রথম আলোচিত শাস্তি।
এরপর নব্বইয়ের দশকে কোকেন গ্রহণ করে ২২ মাস নিষিদ্ধ হন ইংলিশ পেসার ইয়ান স্মিথ। মাঝে কয়েক বছর এই ইস্যু কিছুটা চাপা পড়ে থাকলেও, ২০০৩ সালে ঝড় তুললেন এক কিংবদন্তি- শেন ওয়ার্ন। বিশ্বকাপের ঠিক আগে কোকেন সেবনের অভিযোগে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন অস্ট্রেলিয়ান এই তারকা।
ওয়ার্নের বিরুদ্ধে তখন শুধু কোকেনই নয়, সিগারেট, অ্যালকোহল, নাইট পার্টি, বিতর্কিত সম্পর্ক- সব মিলিয়ে একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলো তাকে ‘হলিউড’ নামে ডাকতে শুরু করে। তবে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েও শেষ দিকে রিহ্যাবে গিয়ে মাদকমুক্ত জীবন ফিরিয়ে আনেন তিনি।
২০০৬ সালে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন পাকিস্তানের দুই গতির বোলার শোয়েব আকতার ও মোহাম্মদ আসিফ। ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে যায় তারা নিয়েছেন নিষিদ্ধ ন্যানড্রোনিল স্টেরয়েড। শোয়েব দুই বছর ও আসিফ এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন। শোয়েব পরে সুস্থভাবে ফিরলেও আসিফ বারবার জড়িয়ে পড়েন মাদকের সঙ্গে। ২০১৭ সালে দুবাই বিমানবন্দরে আবারও ধরা পড়েন তিনি।
সম্প্রতি ২০২3 সালে নিউজিল্যান্ডের পেসার ডগ ব্রেসওয়েল কোকেন গ্রহণের দায়ে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ হন। এসব ঘটনা স্পষ্ট করে দেয়, সময় বদলালেও ক্রিকেটারদের মধ্যে কিছু অংশ এখনও নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। আইসিসির তথ্যমতে, ডোপ টেস্ট চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৪ জন ক্রিকেটার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন। অনেকে নিয়েছেন ব্যথা কমাতে, কেউবা শারীরিক শক্তি বাড়াতে, আবার কেউ শুধুই একঘেয়েমি দূর করতে।
রাবাদার মতো একজন পেশাদার, পরিশ্রমী এবং নিয়মিত পারফর্মার যখন মাদকের কেলেঙ্কারিতে জড়ান, তখন তা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতিই নয়, বরং জাতীয় দলের জন্যও একটি বড় ধাক্কা। রাবাদা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণের মূল অস্ত্র, যিনি নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।
তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে হয়তো দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাদকবিরোধী সংস্থা খুব দ্রুতই জানাবে তার শাস্তির মেয়াদ।
শেন ওয়ার্ন, শোয়েব আকতার বা ডগ ব্রেসওয়েলের মতো কেউ কেউ ফিরেছেন খেলায়, আবার কেউ হারিয়ে গেছেন ইতিহাসের পাতায়। রাবাদার সামনে এখন কঠিন এক সময়। তাঁর মতো প্রতিভাবান একজন খেলোয়াড়ের জন্য এই ছন্দপতন হতে পারে এক অভিশাপ।
তবে প্রতিটি পতনের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে জেগে ওঠার সম্ভাবনা। যদি রাবাদা সত্যিই নিজেকে সংশোধন করতে পারেন, তবে হয়তো একদিন তিনি ফিরবেন সেই আগ্রাসী রূপে- যে রূপে ব্যাটসম্যানদের মনে ভয় ধরিয়ে দেন, এবং ফিল্ডারদের মুখে হাসি এনে দেন।
বাংলাধারা/এসআর