ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

নারী ক্রিকেট থেকেও বাদ ট্রান্সজেন্ডাররা: ইংল্যান্ডের নতুন নীতিতে বিতর্কের ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ০৩, ২০২৫, ০১:০৬ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) নারী ও মেয়েদের ক্রিকেটে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পরিবর্তন এনেছে। নতুন এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে জন্মগতভাবে নারী না হলে কেউ ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেটে অংশ নিতে পারবেন না। এর ফলে ট্রান্সজেন্ডার নারীরা আর এ বিভাগে খেলতে পারবেন না।

শুক্রবার ইসিবির ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই নিয়ম কার্যকর হয়। এর আগে ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনও নারী ফুটবল থেকে ট্রান্সজেন্ডারদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দু’টি বড় ক্রীড়া সংস্থার এমন পদক্ষেপ সামাজিক ও ক্রীড়া জগতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের একটি সাম্প্রতিক রায় বড় ভূমিকা রেখেছে। রায়ে বলা হয়েছে, ‘লিগ্যালি নারী’ বলতে বোঝানো হবে কেবল জন্মগত নারীকে- এমনকি যদি কোনো ট্রান্সজেন্ডার নারীর কাছে সরকারি স্বীকৃত জেন্ডার রিকগনিশন সার্টিফিকেটও থাকে, তবুও তিনি এই সংজ্ঞার মধ্যে পড়বেন না।

এই সিদ্ধান্তটি ইসিবির জন্য নতুন একটি চাপ তৈরি করে। ফলে, বোর্ড বলেছে- সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশনা অনুসরণ করেই তারা নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের এলিট স্তরের নারী ক্রিকেট- বিশেষ করে শীর্ষ দুই স্তরে-ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। তবে রিক্রিয়েশনাল (অবসরের সময় খেলা) ক্রিকেট এবং তৃতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত তারা খেলার সুযোগ পেয়ে আসছিলেন।

কিন্তু নতুন নিয়মে সেই সুযোগও সীমিত করা হয়েছে। ইসিবির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আজ থেকে, কেবল জন্মগত নারী খেলোয়াড়রাই নারী ও মেয়েদের ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ট্রান্সজেন্ডার নারীরা চাইলে ওপেন বা মিশ্র লিঙ্গের দলে খেলার সুযোগ পাবেন।”

ইসিবি একদিকে স্বীকার করেছে, এই সিদ্ধান্ত ট্রান্সজেন্ডার নারী খেলোয়াড়দের ওপর “গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব” ফেলবে। অন্যদিকে তারা এটিও বলছে, ক্রিকেট যেন সকলের জন্য সম্মানজনক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক থাকে, সে লক্ষ্যে তারা কাজ চালিয়ে যাবে।

বোর্ডের দাবি, রিক্রিয়েশনাল ক্রিকেটে সবসময়ই এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে খেলাটি লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্য উপভোগ্য হয়। তবে ন্যায্য প্রতিযোগিতার প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নতুন এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

বর্তমানে ক্রীড়াজগতে ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণ নিয়ে মতবিরোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। সাইক্লিং, সাঁতার ও অ্যাথলেটিকসের মতো অনেক আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাও ট্রান্সজেন্ডার অংশগ্রহণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একদিকে লিঙ্গ পরিচয় ও স্বীকৃতির অধিকার, অন্যদিকে শারীরিক সক্ষমতার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার ন্যায্যতা- এই দুইয়ের ভারসাম্য নিয়েই বিতর্ক চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজ ও ক্রীড়াক্ষেত্রে এই বিষয়টি আরও সংবেদনশীল আলোচনার দাবি রাখে। অন্তর্ভুক্তিমূলক মানসিকতা বজায় রেখে কীভাবে প্রতিযোগিতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে ভবিষ্যতে আরো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার।

বাংলাধারা/এসআর