ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

হামজার জোয়ারে জয়ের আনন্দে ভাসল বাংলাদেশ

স্পোর্টস্ ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুন ০৪, ২০২৫, ০৯:৫৩ রাত  

ছবি: সংগৃহিত

দেশের ফুটবলে যেন এক নতুন সুবাতাস বইছে। কেন্দ্রবিন্দুতে এক নতুন নাম- হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জাতীয় দলে নিজের প্রথম হোম ম্যাচেই আলোড়ন তুললেন। ভুটানের বিপক্ষে তার গোল ও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ২-০ ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। সঙ্গে যেন ঢেউ তোলে নতুন আশার।

ম্যাচটির আরেক বিশেষত্ব ছিল- ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের বদলে যাওয়া চেহারা। আধুনিক রূপে ফিরেছে এই ঐতিহাসিক ভেন্যু। হাজারো দর্শকে পরিপূর্ণ গ্যালারি, পতাকা, স্লোগান আর তালে তালে উৎসব- সব মিলিয়ে ছিল এক সিনেমাটিক পরিবেশ। সেই সিনেমার নায়ক ছিলেন হামজাই।

ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের কাজ সাধারণত মাঠের অনুজ্জ্বল নায়ক হয়ে থাকা। বল কাড়া, খেলা গুছিয়ে দেওয়া, প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভেঙে দেওয়া- এ সবই থাকে তাদের দায়িত্বে। কিন্তু হামজা তার দ্যুতি ছড়ালেন ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটেই। জামাল ভূঁইয়ার কর্নার কিক থেকে নিঁখুত এক হেডে গোল করেন তিনি। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার এই ফুটবলারের টাইমিং ও নিখুঁত এক্সিকিউশন দর্শকদের এনে দেয় গোলের স্বাদ, আর বাংলাদেশকে এগিয়ে দেয় ১-০ ব্যবধানে।

গ্যালারির বাঁধভাঙা উল্লাসে বোঝা গেল, এই গোল শুধু একটি গোল নয়- এটি ছিল প্রত্যাশার জবাব, আত্মবিশ্বাসের ফিরে আসা।

মাঠে হামজার উপস্থিতি কেবল রক্ষণে নয়, পুরো ম্যাচেই ছিল একটি ভিন্ন ছাপ। বল কাটার দক্ষতা, পজিশনিং, পাসিং ও খেলার প্রতি নিবেদন তাকে দলটির প্রাণভোমরা করে তুলেছিল। যেন এক নেতা, যিনি মাঠে উপস্থিত থাকলেই পুরো দল আত্মবিশ্বাসে ভরে ওঠে।

হামজার সঙ্গে গ্যালারিও যেন একাত্ম ছিল। পোস্টারে, ব্যানারে, স্লোগানে ফুটে উঠেছিল সমর্থকদের ভালোবাসা। গোল করার পর ‘হামজা! হামজা!’ ধ্বনিতে কেঁপে উঠেছিল স্টেডিয়াম।

হামজার পাশাপাশি নজর কেড়েছেন আরও একজন নতুন মুখ- তরুণ লেফট উইঙ্গার ফাহমিদুল ইসলাম। সৌদি আরবের প্রস্তুতি ক্যাম্প থেকে ফিরে ইতালি হয়ে ঢাকায় এসে জাতীয় দলে অভিষেক হলো তার। প্রথমার্ধেই দেখিয়েছেন কিছু কার্যকর পাস, দুর্দান্ত এক গোলের সুযোগ তৈরি এবং বল ফিরে পেতে অসাধারণ চেষ্টা। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচের গতি ও তালে মানিয়ে নিতে তাকে কিছুটা সংগ্রাম করতেও দেখা গেছে।

বিরতির পর কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা আক্রমণে আনেন বদল। মাঠে নামেন শেখ মোরসালিন ও ইব্রাহিম। আর তাদের সমর্থনে মধ্যমাঠে খেলেন সোহেল রানা। ম্যাচের ৫০ মিনিটে বক্সের বাইর থেকে নেওয়া তার দুর্দান্ত শট ভুটানের জালে জড়ায়। ২-০! স্বাগতিকদের উল্লাস আরও তুঙ্গে ওঠে।

এই মুহূর্ত থেকে যেন ভুটানও টের পায়- হামজা থাকা আর না থাকা মাঠের খেলায় কতটা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা বল দখলে নেয় তারা, দুটি ভালো আক্রমণ তোলে। একবার তো নিশ্চিত গোলের মতো পরিস্থিতিও তৈরি করে। তবে গোলবারের নিচে থাকা মিতুল মারমা তার অভিজ্ঞতায় বলটি ফিরিয়ে দলকে রক্ষা করেন।

এই ম্যাচ ছিল মূলত ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বের প্রস্তুতি ম্যাচ। এই জয় দলকে কেবল আত্মবিশ্বাসই দিচ্ছে না, বরং সমর্থকদের কাছেও একটি আশার রেখা টেনে দিয়েছে।

হামজা দেওয়ান চৌধুরীর আগমন, মাঠে তার দৃপ্ত উপস্থিতি এবং নতুন কিছু মুখের সাহসী পারফরম্যান্স— এসব মিলিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে যে এক নতুন ঢেউ বইছে, তা বলাই যায়। এই ঢেউ টিকে থাকুক, সামনে এগিয়ে যাক, এটাই এখন সমর্থকদের কামনা।

বাংলাধারা/এসআর