ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের উৎসবে সহিংসতা: ফ্রান্সে নিহত ২, আটক ৫৫৯ জন

স্পোর্টস্ ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুন ০১, ২০২৫, ০৫:১৪ বিকাল  

ছবি: সংগৃহিত

প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) ঐতিহাসিক জয় ঘিরে সারা ফ্রান্সজুড়ে উচ্ছ্বাস ছিল তুঙ্গে। প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়- স্বাভাবিকভাবেই এটি ছিল পিএসজি সমর্থকদের জন্য এক গর্বিত মুহূর্ত। তবে সেই আনন্দ উদ্‌যাপন রাতারাতি রূপ নেয় ভয়াবহ সহিংসতায়। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দুইজন, আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৫৫৯ জনকে।

শনিবার (৩১ মে) রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ইতালির ক্লাব ইন্টার মিলানকে হারিয়ে ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে পিএসজি। ম্যাচ শেষ হতেই প্যারিসসহ দেশের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার সমর্থক নেমে আসেন রাস্তায়। কিন্তু গভীর রাতে রাজধানীর চ্যাম্পস এলিসিস এলাকা পরিণত হয় এক রণক্ষেত্রে। উত্তেজিত জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ।

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, সেদিন রাতভর দেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। রাজধানী প্যারিসেই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটে। সেখানে একাই গ্রেপ্তার করা হয় ৪৯১ জনকে। মোট গ্রেপ্তার হওয়া ৫৫৯ জনের মধ্যে ৩২০ জনকে নেওয়া হয়েছে পুলিশি হেফাজতে, যাদের প্রায় অর্ধেকই প্যারিসের বাসিন্দা।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ব্যবহার করে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান। তবে পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বিক্ষুব্ধ দাঙ্গাবাজরা পুড়িয়ে দেয় বাসস্টপ, যানবাহন এবং দোকানপাট। রাতভর দেশের বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক গাড়িতে আগুন লাগানোর খবর পাওয়া যায়। সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১৯২ জন, যার মধ্যে ২২ জন পুলিশ সদস্য এবং ৭ জন দমকল কর্মীও রয়েছেন।

পিএসজির জয়ের আনন্দে এমন সহিংস পরিণতি গোটা দেশজুড়ে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সহিংসতায় জড়িতদের শনাক্ত করতে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সহিংসতা ঠেকাতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্যারিসসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় কোনও খেলাধুলার আয়োজন বা বিজয়ের পর জনতার উচ্ছ্বাসকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ফ্রান্সে নতুন নয়। তবে এবারের ঘটনা ভয়াবহতার দিক থেকে অতীতের অনেক কিছুকেই ছাপিয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক সহাবস্থানের প্রশ্নে এটি বড় এক সতর্ক সংকেত হিসেবেও দেখছেন অনেকে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় যেমন পিএসজির ইতিহাসে এক অনন্য অর্জন, তেমনি এর ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতা দেশের সামাজিক পরিস্থিতিকে করেছে আরও প্রশ্নবিদ্ধ। এখন দেখার বিষয়- এই সহিংসতার নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান ও অভিযুক্তদের বিচারে কতটা দ্রুত ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে দেশটির প্রশাসন।

 

বাংলাধারা/এসআর